কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন উপন্যাসে ভবঘুরে হিমুর কথা পড়েছি আমরা। শুধু মানুষ না মহাকাশেও নাকি এমনই ভবঘুরে গ্রহের অস্তিত্ব রয়েছে। ভবঘুরে গ্রহ বলতে মূলত তারকা বিহীন গ্রহকে বোঝানো হয়। মহাকাশে তারকাযুক্ত গ্রহের চেয়ে নাকি ভবঘুরে গ্রহের সংখ্যাই বেশি। সেই ভবঘুরে গ্রহের সন্ধানে নাসা ন্যান্সি গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করা হবে। ভবঘুরে গ্রহের সন্ধানসহ গ্রহমন্ডল তৈরির রহস্য নিয়ে কাজ করবে টেলিস্কোপটি।
২০২৭ সালে ভবঘুরে গ্রহদের নজরে আনতে যাত্রা শুরু করবে রোমান টেলিস্কোপ। আপাতত বিজ্ঞানীদের ধারণা টেলিস্কোপের মাধ্যমে ৪০০ ভবঘুরে গ্রহের সন্ধান পাওয়া যাবে। এসব গ্রহের অনেকগুলোই পৃথিবীর ভর সদৃশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাসার গবেষক ডেভিড বেনেট জানান, আমাদের ধারণা আমাদের গ্যালাক্সিতে তারার চেয়ে ২০গুণ বেশি ভবঘুরে গ্রহের অস্তিত্ব আছে। এই কর্মসূচিতে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর ভরের চেয়ে কম ভরের গ্রহগুলোর সংখ্যা জানার চেষ্টা করছি আমরা। নাসার গবেষক দল মাইক্রোলেন্সিং অবজারভেশন ইন অ্যাস্ট্রোফিজিকস এমওএ নামের নয় বছরের একটি গবেষণার মাধ্যমেই টেলিস্কোপের মিশন পরিচালনা করা হচ্ছে। মাইক্রোলেন্সিং হচ্ছে এমন মহাজাগতিক ঘটনা যখন কোনো বস্তু যেমন গ্রহ বা তারকা অন্য কোনো তারকার সামনে সোজাসুজি চলে আসে। স্পেস-টাইমের সংকোচনের কারণে দূরবর্তী তারার আলো সামনের বস্তুর কারণে বেঁকে যায় এবং প্রাকৃতিকভাবে লেন্সের মতো আচরণ করে। আলো দেখে জ্যোতির্বিদেরা পেছনের তারকা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করেন।
জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাহিরো সুমি জানান, মাইক্রোলেন্সিংয়ের মাধ্যমে কম ভরের উন্মুক্ত বা ভবঘুরে গ্রহের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। এভাবে আদি প্রকৃতির কৃষ্ণগহ্বরের অস্তিত্ব পাওয়ার সুযোগ আছে। যা কখনই হয়তো সরাসরি দেখা যাবে না তা মধ্যাকর্ষের মাধ্যমে আবিষ্কার, বস্তুর অস্তিত্ব টের পাওয়া বেশ রোমাঞ্চকর। গবেষক দলের নিবন্ধ জানাচ্ছে, আমাদের গ্যালাক্সিতে তারকা আবর্তিত গ্রহের চেয়ে ৬ গুণ বেশি ভবঘুরে গ্রহের সন্ধান পাওয়া যাবে। গেল এক দশকে সৌরজগতের বাইরে পাঁচ হাজার তিনশর বেশি গ্রহের সন্ধান মিলেছে। এই সব গ্রহ আকারে বড় এবং তারকাকেন্দ্রিক। অধ্যাপক সুমির ভাষ্যে, পৃথিবী সদ্যৃশ ভবঘুরে গ্রহের সংখ্যা বেশি। তারকা কেন্দ্রিক গ্রহ আর উন্মুক্ত ঘুরে বেড়ানো গ্রহগুলোর অনুসন্ধানে গ্রহমন্ডল তৈরির রহস্য আমরা জানতে পারব।
সৌরজগতের মতো গ্রহমণ্ডল তৈরি তো আবাসিক ভবন তৈরির মতো সহজ বিষয় না। একটা ফুটবল দল গঠনের প্রক্রিয়াই তো অনেক জটিল। সেখানে গ্রহমন্ডল বা সৌরজগতের মতো মহাজাগতিক স্থাপনা তৈরি নিশ্চয় অনেক জটিল প্রক্রিয়া। যারা স্টার ট্রেক সিরিজের ভক্ত তারা জানেন সিরিজের শুরুর দিকে খেয়াযানের অভিযাত্রীরা কীভাবে একাকী গ্রহ গোথোসের সন্ধান পান। সেই খেয়াযাত্রীরা প্রথম ভবঘুরে গ্রহ বা ‘রউগ প্ল্যানেট’ শব্দ প্রচলন করে।
মাইক্রোলেন্সিং ঘটনা খুব নিয়মিত ঘটনা নয় বলেই গবেষকেরা বেশ সতকর্তার সঙ্গে কাজ করছেন। প্রথমদিকে ধারণা করা হচ্ছিল রোমান হয়তো ৫০টি গ্রহের সন্ধান পাবে। নতুন গবেষণা নতুন তথ্য দিচ্ছে। এখন গবেষকেরা জানাচ্ছেন প্রায় ৪০০টি ভবঘুরে গ্রহের সন্ধান পাওয়া যাবে। ১.৮ মিটার রোমান টেলিস্কোপের তথ্যের সঙ্গে জাপানের প্রাইম টেলিস্কোপের তথ্য নিয়ে কাজ করবে গবেষকেরা। পৃথিবী থেকে সংগৃহীত তথ্য আর রোমানের মহাকাশের অবস্থানের তথ্য সংযুক্ত করে কার্যকর উপায়ে ভবঘুরে গ্রহের ভর জানতে পারবেন গবেষকেরা।
সূত্র: সাইটেক ডেইলি