আরব্য রজনীর উপন্যাসে কাচের টুকরা থেকে আলো বের হওয়ার উল্লেখ রয়েছে। এবার কল্প দুনিয়ার মতো স্বচ্ছ কাচকে শক্তির আধার হিসেবে ব্যবহারের কৌশল উদ্ভাবন করছেন সুইজারল্যান্ডের ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল দে লুজানের গ্যালাটিয়া ল্যাবের বিজ্ঞানী গোজডেন টোরুন। জাপানের বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় পরিচালিত এ গবেষণার ফলাফল ফিজিক্যাল রিভিউ অ্যাপ্লায়েড সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
এক সেকেন্ডের এক কোয়াড্রিলিয়ন ভাগকে এক ফেমটোসেকেন্ড বলে। এক সংখ্যার পরে ১৫টি শূন্য বসলে তাকে কোয়াড্রিলিয়ন বলে। এই ফেমটোসেকেন্ড সময়ে লেজার রশ্মি ব্যবহার করে সেমিকন্ডাক্টিং প্যাটার্ন তৈরি করে টেলুরাইটের তৈরি স্বচ্ছ কাচকে আলোক শক্তির আধারে পরিণত করা হয়েছে।
গবেষণার তথ্যমতে, টেলুরাইট কাচের পরমাণুর গঠন সম্পর্কে জানতে ফেমটোসেকেন্ড সময়ে উচ্চ শক্তির লেজার আলোর দ্রুত স্পন্দনের সংস্পর্শে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে ন্যানোস্কেলে টেলুরিয়াম ও টেলুরিয়াম অক্সাইড স্ফটিক গঠন করতে সমস্যা হলেও পরে অর্ধপরিবাহী পদার্থকে কাচের মধ্যে রাখার পর দেখা যায়, টেলুরিয়াম কাচকে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আনলে সেখানে স্বল্পমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
গবেষণার বিষয়ে বিজ্ঞানী গোজডেন টোরুন বলেন, টেলুরিয়াম অর্ধপরিবাহী। আমরা টেলুরাইট কাচের পৃষ্ঠে টেকসই লেখার জন্য গবেষণা শুরু করি। আলোর সংস্পর্শে টেলুরিয়াম কাচকে আনলে সেখানে বিদ্যুতের উপস্থিতি দেখা যায়। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে টেলুরিয়াম কাচকে সহজে বিদ্যুতের আধার হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় কোনো অতিরিক্ত উপকরণের প্রয়োজন হয় না। একটি সক্রিয় ফটোকন্ডাক্টিভ উপাদান তৈরি করতে শুধু টেলুরাইট গ্লাস ও একটি ফেমটোসেকেন্ড লেজার প্রয়োজন হয়। টোকিও টেকের কর্মীরা বিশেষ ধরনের টেলুরাইট গ্লাস তৈরি করেছেন। এক সেন্টিমিটার ব্যাসের একটি টেলুরাইট গ্লাসের পৃষ্ঠে আলো ফেললে সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এই কৌশল বেশ চমৎকার। আমরা আলো ব্যবহার করে কাচকে একটি অর্ধপরিবাহীতে পরিণত করছি। ভবিষ্যতে সাধারণ কাঁচকে আলোক শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহারের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।
টেলুরিয়াম একটি রাসায়নিক মৌল, যার পারমাণবিক সংখ্যা ৫২। এই মৌল বেশ ভঙ্গুর, হালকা বিষাক্ত ও বিরল ধরনের। দেখতে কিছুটা রুপালি-সাদা ধাতব পদার্থের হয়ে থাকে টেলুরিয়াম। টেলুরিয়াম রাসায়নিকভাবে সেলেনিয়াম ও সালফারের দলের, তাই এটিকে চ্যালকোজেন বলা হয়। টেলুরিয়াম পৃথিবীর তুলনায় মহাবিশ্বে অনেক বেশি পাওয়া যায়। পৃথিবীর ভূত্বকে চরম বিরল মৌল হিসেবে এই পদার্থের দেখা মেলে।
সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ