প্রজাপতি
প্রজাপতি

প্রজাপতির ডানার নকশায় তৈরি হচ্ছে ভাঁজযোগ্য ইলেকট্রনিকস যন্ত্র

‘প্রজাপতি! প্রজাপতি! কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা’ গানটিতে নিজের মুগ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। প্রজাপতির রঙিন ডানা ভাঁজ খোলা বা বন্ধ অবস্থায়ও দেখা যায়। আর তাই তো প্রজাপতির ডানার আদলে কোনো ইলেকট্রনিকস যন্ত্র বানানো যায় কি না, তা নিয়ে কয়েক দশক ধরে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার আজুউ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী প্রজাপতির ডানার নকশা কাজে লাগিয়ে ভাঁজযোগ্য ইলেকট্রনিকস যন্ত্র তৈরির নতুন নকশা উন্মোচন করেছেন। নতুন এ নকশায় তৈরি ইলেকট্রনিকস যন্ত্রের আকার কমানোর পর আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে। নেচার ইলেকট্রনিকস সাময়িকীতে নতুন নকশা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে বিজ্ঞানী সেয়ংইয়ং হান জানিয়েছেন, প্রকৃতিতে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে, যেগুলো বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে বড় হয়। প্রকৌশল দৃষ্টিকোণ থেকে প্রজাপতির ডানার আদলে ইলেকট্রনিকস যন্ত্র তৈরি করা সম্ভব। এসব ইলেকট্রনিকস যন্ত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনের উন্নতি করতে পারে। প্রজাপতি জন্মের আগে কোকুনে ডানা ভাঁজ করা অবস্থায় থাকে। কোকুনের ভেতরে নিজেকে পুরো চূর্ণবিচূর্ণ অবস্থায় রাখে। কোকুনের ভেতরে ডানা জৈবিক তরলে আবৃত থাকে, যেন ডানা চূর্ণবিচূর্ণ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যখন একটি প্রজাপতি তার কোকুন থেকে বেরিয়ে আসে, তখন তরল বাষ্পীভূত হয়। ধীরে ধীরে প্রজাপতি তার ডানা উন্মোচন করে। বিজ্ঞানীরা এই প্রাকৃতিক ঘটনার অনুকরণে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের নকশা তৈরি করছেন।

প্রজাপতির ডানার নকশায় তৈরি ভাঁজযোগ্য ইলেকট্রনিকস যন্ত্র তৈরির জন্য প্রথমে পরিবর্তনশীল একটি যৌগিক উপাদান তৈরি করা হয়। এই উপাদানের কঠোরতা ও কোমলতা অতিরিক্ত কোনো পদার্থের প্রয়োজন ছাড়াই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী হ্যান বলেন, ‘মূল নকশায় রুপার (সিলভার) তৈরি ন্যানো তার ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোকে শেপ মেমোরি পলিমার বা এসএমপি বলা হয়। আর সঙ্গে রবারের লম্বা শিকলের মতো অণুর ইলাস্টোমার ব্যবহার করা হয়েছে। রুপার ন্যানো তারটি কেবল পরিবাহী নয়, একই সঙ্গে যান্ত্রিকভাবে সেন্সর হিসেবে কাজ করে। শুধু তা–ই নয়, তাপ শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে আকার পরিবর্তন করতে পারে। গবেষকেরা এই প্রক্রিয়ায় একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র তৈরি করেছেন, যা চূর্ণবিচূর্ণ অবস্থা থেকে নমনীয় উপাদানের কারণে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে যেতে সক্ষম।’

নতুন নকশায় তৈরি করা যন্ত্রটি অনেকটা ছাতা বন্ধ করে রাখার মতো করে খুব ছোট জায়গায় সংকুচিত করে রাখা যায়। গবেষকেরা এখন পর্যন্ত ৭ বর্গসেন্টিমিটারের একটি স্পর্শনির্ভর প্যানেল ডিসপ্লে তৈরি করেছেন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে। এই পর্দা ছোট ক্যাপসুলের আকারে চূর্ণবিচূর্ণ অবস্থায় রাখা যায়। পরে তা আবারও মসৃণ ও সমতল পৃষ্ঠে পরিণত হয়। নতুন এই কৌশল বাঁকানো বা ভাঁজ করা ইলেকট্রনিকস যন্ত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: টেক এক্সপ্লোর