এখনো হীরা সবচেয়ে কঠিন বস্তু
এখনো হীরা সবচেয়ে কঠিন বস্তু

হীরার চেয়েও কঠিন বস্তুর সন্ধান, কী সেই বস্তু?

সবচেয়ে কঠিন বস্তু কী বলুন তো? প্রেমিকার মন? না কোহিনূর হীরক খণ্ড? তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিন্ন এক বস্তুর খোঁজ মিলেছে গবেষণাগারে। কোনোভাবেই ভাঙা যাবে না, এমন দাবি করা হচ্ছে নতুন বস্তু নিয়ে। কোহিনূর কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, ‘তোমারে ঘেরিয়া জাগে কত স্বপ্ন’। নতুন বস্তু নিয়েও অনেক কাল স্বপ্ন দেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই বস্তু নতুন সব উপকরণ তৈরিতে ব্যবহার করা হবে, যা মোটরগাড়ি ও নভোযানের জন্য প্রতিরক্ষামূলক আবরণ তৈরিতে দারুণ পরিবর্তন আনবে বলে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন।

এত দিন বোরন নাইট্রাইড ও সিলিকন কার্বাইড ছিল ল্যাবে তৈরি সবচেয়ে কঠিন পদার্থ। এসব যৌগ হীরার চেয়েও ১৮ শতাংশ কঠিন। কাগজে–কলমে তাদের চেয়ে কঠিন যৌগ হিসেবে আলোচিত ছিল কার্বন নাইট্রাইড। বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে এমন বস্তু তৈরিতে কাজ করছেন।

হীরাকে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন উপাদান হিসেবে মনে করা হয়। নতুন বস্তু আপতদৃষ্টিতে হীরার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। কার্বন ও নাইট্রোজেনকে চরম তাপ ও চাপে রাখলে কার্বন নাইট্রাইড নামক উপাদান ঘন বোরন নাইট্রাইডের চেয়ে শক্ত আকার ধারণ করে। বোরন নাইট্রাইড হীরার পরে দ্বিতীয় কঠিনতম উপাদান হিসেবে আলোচিত।

অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালস জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় বিশ্বের সবচেয়ে কঠিনতম বস্তু হিসেবে নতুন এই বস্তু নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। নতুন যুগান্তকারী পদার্থটি গাড়ি ও নভোযানের প্রতিরক্ষামূলক আবরণ, উচ্চ–সহনশীল সরঞ্জাম, সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল, ফটোডিটেক্টরসহ নানা শিল্পে ব্যবহারের জন্য নতুন উপকরণ তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর কনডেন্সড ম্যাটার ফিজিকস অ্যান্ড কমপ্লেক্স সিস্টেমসের বিজ্ঞানী ডমিনিক ল্যানিয়েল বলেন, নতুন কার্বন নাইট্রাইড উপাদান প্রথম আবিষ্কারের পর নতুন উপাদান তৈরি করতে অনেক প্রচেষ্টা ছিল। গবেষকেরা তিন দশক ধরে অনেক কাজ করেছেন। উচ্চ চাপের মাধ্যমে তৈরি নতুন এই যৌগ তিন দশকের পরিশ্রম বাস্তবে পরিণত করেছে।

লিংকোপিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ফ্লোরিয়ান ট্রাইবেল বলেন, এ উপকরণ বহুমাত্রিকভাবে কার্যকর। বিজ্ঞানীরা ১৯৮০ সাল থেকে তাপের উচ্চ প্রতিরোধক্ষমতার কার্বন নাইট্রাইডের সম্ভাব্যতা তাত্ত্বিকভাবে জানেন। তিন দশকের বেশি গবেষণা ও সংশ্লেষণের একাধিক প্রচেষ্টার পরে বিশ্বের কোনো গবেষণাগারে কার্বন নাইট্রাইড তৈরি করা যায়নি।

সাম্প্রতিক গবেষণায় এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। বিভিন্ন ধরনের কার্বন নাইট্রোজেনের পূর্বসূরি যেমন গুয়ানিডিন হাইড্রোক্লোরাইড (এইচ), থিওরিয়া (টি) এবং ইউরিয়াকে (ইউ) নিয়ে গবেষণা করেন তাঁরা। এসব উপাদান ৭০ থেকে ১৩৫ গিগাপ্যাসকেলের চাপের মধ্যে রাখা যায়। এই চাপ আমাদের বায়ুমণ্ডলীয় চাপের প্রায় ১ মিলিয়ন গুণ বেশি। এসব পদার্থ ১৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম করা হয়। এরপরে বিভিন্ন যৌগের পারমাণবিক বিন্যাস বিশ্লেষণ করা হয়।

দেখা যায়, তিনটি কার্বন নাইট্রাইড যৌগে কঠিনতম আচরণের জন্য প্রয়োজনীয় গাঠনিক ব্লক রয়েছে। তিনটি যৌগই তাদের মধ্যে হীরার মতো গুণাবলি বজায় রাখে। এসব যৌগ সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় হীরার চেয়ে বেশি কাঠিন্য দেখায়। এ তিনটি যৌগ পদার্থের উচ্চ শক্তির ঘনত্ব আছে। অল্প পরিমাণে ভরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে শক্তি ঘনীভূত হতে দেখা যায়। এই যৌগগুলোর সম্ভাব্য ব্যবহার হীরার প্রতিদ্বন্দ্বী বা বিকল্প হতে পারে। বিজ্ঞানী ডমিনিক ল্যানিয়েল বলেন, নতুন এই যৌগ উচ্চ চাপ সহনশীল। শক্তিশালী পদার্থ হিসেবে হীরার বিকল্পে ব্যবহার করা যাবে।

সূত্র: ইনডিপেন্ডেন্ট