২০২২ সালে হুট করেই যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জনস্বাস্থ্য নিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। করোনা মহামারির পরে আবার কী এল বলে গণমাধ্যমগুলোতে প্রশ্ন তোলা হয়। সেই জরুরি অবস্থা জারি করার পেছনে নতুন কোনো মহামারি ছিল না, পুরোনো শত্রু পোলিও আতঙ্কে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি হয়।
সেবার নিউইয়র্ক সিটির পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থায় পোলিও ভাইরাস পাওয়া যায়। নিউইয়র্ক সিটিসহ আশপাশের চারটি এলাকার পয়োনিষ্কাশন নর্দমার নমুনা পরীক্ষা করে পোলিও ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল। নিশ্চিতভাবে একজন রোগীও শনাক্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে গত ১১ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো পোলিও রোগী পাওয়া গেল সেবার। স্বাভাবিক সময়ে ৪০ দিনের বেশি লেগে যায় পোলিও শনাক্ত করতে, এবার সেই সময় কমিয়ে নতুন এক পদ্ধতিতে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে পোলিও শনাক্তে সাফল্য পেয়েছেন একদল গবেষক।
দ্য জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজে নতুন পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে গবেষক দল। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত শিশুদের মলের তথ্য ব্যবহার করে তারা এই পদ্ধতি শনাক্ত করেছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ পোলিওর ঝুঁকিতে আছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।
ময়লা পানিতে পোলিও শনাক্তকরণে নতুন একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই পদ্ধতিতে আগের চেয়ে কম সময়ে পোলিও শনাক্ত করা যাবে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি এমএইচআরও এই গবেষণা পরিচালনা করে।
নতুন পদ্ধতিতে ২৩ দিনের মধ্যে পোলিও শনাক্ত করা যাচ্ছে, যেখানে আগে সময় লাগত ৪২ দিনের মতো। এই পদ্ধতি ৯৯ শতাংশ কার্যকর বলে পরীক্ষায় ফলাফল পাওয়া গেছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষক অ্যালেক্স শ বলেন, ‘এই পদ্ধতি পোলিওর ধরন শনাক্তে বেশ কার্যকর। পোলিও সংক্রমণের সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে এই শনাক্তকরণ পদ্ধতি বেশ সফল হবে বলে আমরা মনে করি। বিভিন্ন প্যাথোজেন শনাক্তকরণের মাধ্যমে আমরা পোলিওর উপস্থিতি দ্রুত টের পাচ্ছি।’
আগের পদ্ধতিগুলোর ৪০-৪২ দিন পর্যন্ত লেগে যায় পোলিও শনাক্তে, এতে জনস্বাস্থ্যবিদদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের গতি ধীর হয়ে যায়। সাধারণভাবে মল সংগ্রহের মাধ্যমে ল্যাবে পরীক্ষা করে পোলিও শনাক্ত করা হয়।
নতুন এই পদ্ধতির নাম ডিডিএনএস। এই পদ্ধতি অনুসারে স্থানীয়ভাবে মল পরীক্ষার সুযোগ আছে। আগে আফ্রিকার নানা দেশে মল সংগ্রহ করে নির্ধারিত ল্যাবে পরীক্ষা করা হতো। অনেক ক্ষেত্রে ল্যাবগুলো দূরের কোনো দেশে পরিচালনা করা হয়। নতুন এই পদ্ধতিতে গড়ে ১৯ দিনের মধ্যে ফলাফল সংগ্রহ করা যাচ্ছে।
নতুন এই পদ্ধতি পোলিওর জন্য নতুন হলেও একইভাবে ইবোলা, হাম ও এমপক্স শনাক্তকরণে এরই মধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। বিজ্ঞানী হাভিয়ের মার্টিন বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে আমরা পোলিও নির্মূলের ক্রান্তিকালীন এক সময়ে বাস করছি। টিকার মাধ্যমে অনেক দেশে পোলিও দূর করা হচ্ছে। আবার নতুন নতুন এলাকায় পোলিওর আবির্ভাব ঘটছে। নতুন এই পদ্ধতি দ্রুততার সঙ্গে পোলিওর সন্ধান দিচ্ছে। এরই মধ্যে গবেষক দল এই পদ্ধতি যুক্তরাজ্যে পরীক্ষা করে সাফল্য পেয়েছেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি ও জুলাইয়ে লন্ডন শহরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থায় পোলিও ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া যায়। তখন এই পদ্ধতিতে পোলিওর শনাক্ত করা হয়।’
গবেষক অ্যালেক্স শ আরও জানান, লন্ডন, নিউইয়র্ক কিংবা ইসরায়েলের মতো এলাকায় পোলিওর সন্ধান মিলছে, যে কারণে সতর্ক হতে হবে। উন্নত দেশে যদি পোলিওর দেখা মেলে, তাহলে বলা যায় উন্নয়নশীল দেশে পোলিও এখনো লুকিয়ে আছে। নতুন পদ্ধতি পোলিও দূর করবে না, কিন্তু শনাক্ত করার সময় কমিয়ে দ্রুত কাজ করতে সহায়তা করবে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান