নাসার ওসিরিস-রেক্স মহাকাশযান পৃথিবীতে ‘বেন্নু’ নামের একটি গ্রহাণুর নমুনা নিয়ে এসেছিল বেশ কয়েক বছর আগে। সেই নমুনা বিশ্লেষণ করে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছেন জ্যোতির্বিদেরা। গ্রহাণুটির নমুনা বিশ্লেষণ করে মহাকাশে প্রাচীন সমুদ্রের অস্তিত্বের কথা জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, সৌরজগতের বিকাশ ও পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তির ঘটনা জানার সূত্র লুকিয়ে রয়েছে এই গ্রহাণুর নমুনাতে। বেন্নুর নমুনা থেকে প্রাথমিকভাবে জীবন বিকাশের একটি তত্ত্বের ধারণাও দিয়েছেন জ্যোতির্বিদেরা।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গ্রহাণুর নমুনা বিশ্লেষণের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী দান্তে লরেটা বলেন, বেন্নু গ্রহাণুর শিলা উজ্জ্বল ভূত্বক দ্বারা আবৃত। সেখানে বিরল ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ ফসফেট উপাদান পাওয়া গেছে। উপাদানটি এনসেলাডাস চাঁদের পৃষ্ঠে দেখা যায়। বেন্নুতে প্রচুর পরিমাণে পানি ও কার্বন রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, বেন্নুর মতো কোনো গ্রহাণু পৃথিবীতে জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান নিয়ে এসেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার গবেষকদের ধারণা, বেন্নু গ্রহাণু একসময় পানিসমৃদ্ধ কোনো গ্রহের অংশ ছিল। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী দান্তে লরেটা বলেন, বেন্নুর কিছু শিলা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব শিলা পাতলা ও উজ্জ্বল ভূত্বকের মধ্যে আবৃত। এই ভূত্বক শনি গ্রহের চাঁদ এনসেলাডাসে পাওয়া উপাদানের মতো। এনসেলাডাসে বরফের নিচে লবণাক্ত তরল পানির মহাসাগর রয়েছে।
বেন্নু ও শনির চাঁদ এনসেলাডাসের মধ্যে খনিজ পদার্থের সাদৃশ্যের তথ্য চমকে দিয়েছে সবাইকে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফ্যাবিয়ান ক্লেনার বলেন, বেন্নুর উপাদান ও এনসেলাডাস চাঁদের উপাদানের মধ্যে আসলেই অনেক মিল রয়েছে। এমন উপাদানের উপস্থিতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে যখন শিলা সমুদ্রের তলদেশে ধাক্কা দেয়, তখন মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে এমন পদার্থ বহির্মুখী প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। এমন উপাদান পানির উপস্থিতি থাকার বিষয়টি নির্দেশ করে। গ্রহাণুটির নমুনা আমাদের বোঝার জন্য নতুন দরজা খুলে দিচ্ছে। পৃথিবীতে কীভাবে জীবন শুরু হয়েছিল, তার ধারণা করছি আমরা। হয়তো কেবল পৃথিবীতেই নয়, মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রাণের বিকাশের সঙ্গে এমন গ্রহাণুর ভূমিকা রয়েছে। বেন্নুর খনিজের তথ্যাদি বিজ্ঞানীদের মহাবিশ্বে প্রাণের আগমনের বয়স বিষয়ে নতুন তথ্য দিচ্ছে। আমাদের মহাবিশ্বে প্রাণের আগমন আগের ধারণার চেয়ে বেশ পরে হতে পারে।
গ্রহাণু বেন্নুতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ও অন্যান্য বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে। আনুমানিক ৫০০ মিটার ব্যাসের গ্রহাণু বেন্নু ১ দশমিক ২ বছরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। প্রতি ছয় বছরে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে গ্রহাণুটি। গ্রহাণুটির উপরিভাগ বেশ শক্ত ও বড় বড় শিলায় আবৃত। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, আগামী ২২ শতকের শেষ দিকে বেন্নুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষের ক্ষীণ আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র: আর্থ ডটকম