সকালে অনেকেরই ঘুম ভাঙে নানা রঙের পাখির ডাকে। কখনো ভেবেছেন এত রঙিন পাখি এল কীভাবে? আপনি জানালার বাইরে যত রঙিন পাখি দেখতে পান, তার রং নির্ভর করছে আপনি আসলে কোথায় থাকেন? আপনি যদি বিষুবরেখা থেকে অনেক দূরে থাকেন, তবে রঙিন পাখি দেখার সম্ভাবনা কম। আপনি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের যত কাছে থাকবেন, তত বেশি রঙিন পালকের পাখি দেখতে পাবেন। কারণ, বিশ্বের অন্যান্য স্থানের তুলনায় গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি উজ্জ্বল রঙের পাখি রয়েছে। উজ্জ্বল রঙের পাখিরা কীভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় এসেছে, তা জানতে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
পাখির জীবনে রঙিন পালকের উপস্থিতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গীর মনোযোগ আকর্ষণ, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ছদ্মবেশ ধারণ করতে রঙিন পালকের ভূমিকা রয়েছে। পাখির পূর্বপুরুষদেরও রঙিন ও উজ্জ্বল পালক ছিল বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। সেই পূর্বপুরুষেরা সম্ভবত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বাইরে বাস করত। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়ামের বিজ্ঞানী চ্যাড এলিয়াসন বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীদের ধারণা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে উজ্জ্বল বা আরও রঙিন প্রজাতির পাখি রয়েছে। আমরা এই প্রবণতা বুঝতে চেষ্টা করছি। কীভাবে উজ্জ্বল রঙের পাখি সেখানে পৌঁছেছিল এবং কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাখির পরিবারে রং ছড়িয়ে পড়ে, তা বোঝার চেষ্টা করছি।’
দুটি প্রধান উপায়ে রং প্রাণীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। রঙ্গক পদার্থ ও প্রাণীর গঠন এখানে গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণীদের বিশেষায়িত কোষ মেলানিনের মতো রঙ্গক তৈরি করে, যা কালো এবং বাদামি রঙের জন্য দায়ী। কোষের কাঠামোগত বিভিন্ন বিন্যাসের কারণে আলোর উপস্থিতিতে রং দেখা যায়। কোন বস্তু কেমন রঙিন হবে, তার ওপর আলো কীভাবে পড়ছে, সেটি নির্ভর করে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পাখি উজ্জ্বল রঙ্গক ও কোষের কাঠামোগত অবস্থানের কারণে বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পাখির রঙের কারণ অন্বেষণে চেষ্টা করছেন। বিজ্ঞানীরা ৯ হাজার ৪০৯টি প্রজাতির পাখির ছবি, ভিডিও ও বৈজ্ঞানিক চিত্র পর্যালোচনার মাধ্যমে রঙের ধরন বোঝার চেষ্টা করেন।
বিজ্ঞানীরা ডিএনএর ওপর ভিত্তি করে পাখির রঙের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। ডিএনএ তথ্য থেকে জানা যায়, সব রঙিন পাখির প্রজাতি একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। পাখিদের তথ্য একটি মডেলিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তথ্য বিশ্লেষণের পর জানা যায়, রঙিন পাখি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বাইরে থেকে লাখ লাখ বছর আগে এসেছিল। পরে বিবর্তনের ধারায় বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে যায় পাখিগুলো। মডেলটি সব আধুনিক পাখির পূর্বপুরুষ সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। পাখিরা ডাইনোসরের একটি বিশেষ গোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত হয়েছে। প্রাচীনতম পরিচিত পাখি আর্কিওপটেরিক্স ১৪০ মিলিয়ন বছর আগে বসবাস করত। সেখান থেকে নিওরনিথিস নামক পাখির একটি উপ-গোষ্ঠী ৮০ মিলিয়ন বছর আগে বিবর্তিত হয়। এই দলটি ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে গণবিলুপ্তি থেকে বেঁচে যায়। আর তাই বর্তমানের সব পাখিই নিওরনিথিসের সদস্য।
সূত্র: ফিজিস ডট ওআরজি