গবেষকেরা একটি জীবাশ্ম বন আবিষ্কার করেছেন। সেই বনে ছোট আকারের পামগাছের মতো গাছ আর আর্থ্রোপড বা সন্ধিপদী-জাতীয় অমেরুদণ্ডী প্রাণীর চলার পথ খুঁজে পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বনটি মধ্য ডেভোনিয়ান সময়ের। দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডে আবিষ্কৃত এই জীবাশ্ম গাছের বন পৃথিবীর প্রাচীনতম বন বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। নতুন এক গবেষণায় এই তথ্য পাওয়া গেছে। ৩৯ কোটি বছরের পুরোনো জীবাশ্মের এই বন এখন পর্যন্ত জানা সবচেয়ে প্রাচীন বন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গিলবোয়া জীবাশ্ম বন পাওয়া যায়, তার বয়স ছিল ৩৮ কোটি ৬০ লাখ বছর। নতুন আবিষ্কারের কারণে পুরোনো ও আদি দুটি বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য বোঝার সুযোগ পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আদি বনের গড়ন ও গঠন এখনকার বনের চেয়ে আলাদা ছিল। জিওলজিক্যাল সোসাইটি জার্নালে পুরোনো এই বন নিয়ে একটি বিষদ গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ডেভিস নীল বলেন, এই আবিষ্কার বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা বলা যায়। প্রাচীন বন নিয়ে আমাদের জানার সুযোগ কম। নতুন খুঁজে পাওয়া বন পুরোনো গিলবোয়ায় বনের চেয়ে ভিন্ন। উদ্ভিদের মধ্যে ভিন্নতা দেখছি আমরা। নতুন আবিষ্কৃত বন বেশ আলাদা। এই বনে কেবল এক ধরনের উদ্ভিদের বিকাশ ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। বিলুপ্ত ক্ল্যাডক্সিলোপসিড নামের উদ্ভিদ নিয়ে সেই বন গঠিত হয়। সেই বিলুপ্ত গাছের সঙ্গে এখনকার ফার্ন ও স্ফেনোপসিড নামের গাছের মিল আছে। বিলুপ্ত ক্ল্যাডক্সিলোপসিড উদ্ভিদ দেখতে পাম বা তালগাছের মতো দেখতে। যদিও তারা কোনোভাবেই তালগাছের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।
পুরোনো আদি সেই বনের গাছের লম্বা একটি কেন্দ্রীয় কাণ্ড ছিল। পাতা দেখতে কিছুটা তাল গাছের মতো ছিল। ডাল-মুকুটযুক্ত সেই সব গাছ প্রায় ৬ দশমিক ৫ থেকে ১৩ ফুট বা ২ থেকে ৪ মিটার উচ্চতার ছিল। যে কারণে পুরোনো সেই বনকে খুব বড় বন বলা যাচ্ছে না। বনের জীবাশ্ম গাছের ফাঁপা কাণ্ড ও কাঠামোতে পলিতে ভরে গিয়ে এত কাল ভালোভাবে সংরক্ষিত ছিল।
এই বন মধ্য ডেভোনিয়ান সময়ের। ৩৮ কোটি ৩০ লাখ থেকে ৩৯ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে ছিল বনটি। ডেভোনিয়ান সময়ে এখনকার যুক্তরাজ্য অঞ্চল লরেনশিয়া নামের মহাদেশের অংশ ছিল। নিরক্ষরেখার ঠিক নিচে এই অঞ্চলের অবস্থান ছিল। সেখানকার জলবায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক ছিল। এই ধরনের গাছ নিয়ে গত ৩০ বছর বেশ গবেষণা করা হয়েছে। কিছু জীবাশ্মে গাছে এখনো সংযুক্ত ডালের দাগ দেখা যাচ্ছে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স