পার্কে গেলে বা অবসর সময়ে বাদাম খান অনেকেই। শখের বসে খাওয়া এই বাদামই হতাশাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। তাঁদের মতে, বাদামের প্রদাহবিরোধী ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদানের কারণে মানবদেহে ইতিবাচক ভাব তৈরি হয়। আর তাই নিয়মিত বাদাম খেলে হতাশাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি ১৭ ভাগ পর্যন্ত কমে যায়।
ইউকে বায়োব্যাংকে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী প্রায় পাঁচ লাখ ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত ও জীবনযাত্রার তথ্য সংরক্ষণ করা রয়েছে। এই তথ্যভান্ডার থেকে ২০০৭-২০ সময়কালে সংরক্ষণ করা ১৩ হাজার ব্যক্তির তথ্য পর্যালোচনা করে বাদামের সঙ্গে হতাশা কাটানোর যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনে কমপক্ষে ৩০ গ্রাম বাদাম খান, তাঁরা হতাশাগ্রস্ত হন না।
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন জার্নালে এমনটাই প্রকাশ করেছেন গবেষক দল। যদিও কেন হয় না, সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাদামে কার্যকর অনেক পুষ্টি গুণ রয়েছে। ফেনলস বা ফাইটোস্টেরোলসহ প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্স, ফাইবার, উচ্চমানের প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরে প্রভাব ফেলে। স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব ক্যাস্টিলা-লা মাঞ্চার গবেষক ব্রুনো বিজোজিরো-পেরোনি জানান, আমরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছি, বাদাম নিয়মিত খেলে হতাশাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।
নিয়মিত বাদাম খাওয়া ব্যক্তিদের হতাশ হওয়ার ঝুঁকি কম। বাদাম কম খেলে স্থূলতা, চুল পড়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়াসহ বেশ কিছু সমস্যাও হয়ে থাকে। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জেনা ম্যাক্কিওকি জানান, এই গবেষণার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে আমাদের মন নিয়ন্ত্রণে খাবারের সরাসরি সংযোগ রয়েছে। গড়ে পাঁচ বছরের মতো নিয়মিত বাদাম খাওয়া ব্যক্তিদের হতাশাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, যাঁদের তথ্য পর্যালোচনা করে এ জরিপ চালানো হয়েছে, তাঁরা কখনোই হতাশা কাটানোর জন্য বাদাম খাননি। নিয়মিত খাবারের সঙ্গে বাদামজাতীয় খাবার গ্রহণ করেছেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, পুষ্টিবিদেরা নিয়মিত বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁদের মতে, সব ধরনের বাদামই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। বাদামে উচ্চমাত্রার আমিষ ও আঁশ রয়েছে। বাদামে ভিটামিন ই ও ম্যাগনেশিয়াম পাওয়া যায়। ভিটামিনই ত্বক ও চুলের জন্য ভালো। চুল পড়ার সমস্যায় বাদাম বেশ কার্যকর। আবার নিয়মিত বাদাম খেলে ত্বকে বয়সের ছাপ কম পড়ে। আর তাই সুস্থ জীবনের জন্য প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় ৩০ গ্রাম বা এক আউন্স বাদাম খাওয়া উচিত। নিয়মিত বাদাম খেলে ওজন বৃদ্ধি হয়। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে যায়। আখরোটে হৃৎপিণ্ডের সুস্থতার পাশাপাশি মস্তিষ্কের জন্যও বেশ ভালো। মস্তিষ্ক ও বুদ্ধিমত্তা বিকাশের জন্য প্রতিদিন ২০-২৫ গ্রাম আখরোট খাওয়া ভালো। আর কাজুবাদামে তুলনামূলকভাবে শর্করার পরিমাণ বেশি। ম্যাগনেশিয়ামও থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে।
সূত্র: ইন্ডিপেনডেন্ট