বাংলা রক ব্যান্ড মহীনের ঘোড়াগুলোর বিখ্যাত একটি গান ‘মানুষ চেনা দায়’। সেখানে শোনা যায়, ‘চেনা সহজ নয়, চিনতে লাগে ভয়’। গানের এই কথা শুধু যে মানুষের জন্যই প্রযোজ্য, তা কিন্তু নয়। মহাকাশে একটি গ্রহাণুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যেটি দেখতে অনেকটা ধূমকেতুর মতো। গ্রহাণুটিতে ধুলো বা গ্যাসের লেজ দেখে চমকে গেছেন জ্যোতির্বিদেরা। এই আধা গ্রহাণু-আধা ধূমকেতু নিয়ে নেচার সাময়িকীতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
সাধারণ নাগরিকদের মহাকাশ চর্চায় উৎসাহ দেন বিজ্ঞানীরা। নাগরিক বিজ্ঞানী বলা হয় তাঁদের। এমনই এক দল স্বেচ্ছাসেবী নাগরিক বিজ্ঞানী মহাকাশের বিরল একটি বিষয় খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা গ্রহাণুর ধূমকেতু হওয়ার চেষ্টার বিষয়টি শনাক্ত করেছেন। এরই মধ্যে গ্রহাণুটির মধ্যে ধূমকেতুর মতো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখা যাচ্ছে। গ্রহাণুর এমন ধূমকেতুর মতো আচরণ করার বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। তবে এমন অদ্ভুত মহাজাগতিক গ্রহাণুর সংখ্যা ৫০টির কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা লিখেছেন, তাঁরা কোয়াসি-হিলডা ২০০৯ ডিকিউ১১৮ গ্রহাণুর কার্যকলাপ পরীক্ষার মাধ্যমে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের খোঁজ পেয়েছেন। ধূমকেতুসদৃশ ক্রিয়াকলাপ দেখা যায়—এমন সক্রিয় গ্রহাণু নতুন তথ্য তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছে। সৌরজগতে পানি ও অন্যান্য উদ্বায়ী পদার্থের অবস্থা জানতে এগুলো সম্পর্কে জানা জরুরি। নাসা পার্টনার সিটিজেন সায়েন্স প্রকল্পের নাম অ্যাকটিভ অ্যাস্টেরয়েড। সেখানে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবকেরা গ্রহাণুর ধূমকেতুর মতো আচরণের খোঁজ পেয়েছেন। প্রথম ২০১৬ সালে ধূমকেতুর মতো লেজের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা যায়। তারপরে নিউ মেক্সিকোর অ্যাপাচে পয়েন্ট অবজারভেটরির টেলিস্কোপ ও চিলির ম্যাজেলান বেড টেলিস্কোপ এই গ্রহাণুর ওপরে নজর রাখতে শুরু করে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে গ্রহাণুটিতে আবারও ধূমকেতুর মতো লেজ দেখা গেছে। গবেষকেরা ফটোমেট্রিক বিশ্লেষণ করে লেজের দৈর্ঘ্য ও পৃষ্ঠের উজ্জ্বলতা নির্ণয় করে গ্রহাণুটির কক্ষপথের ইতিহাস বের করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, গ্রহাণুটি প্রায়ই বৃহস্পতি গ্রহের আশপাশে অবস্থান করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা পুরোনো ছবি পরীক্ষা করে একটি সক্রিয় কোয়াসি-হিল্ডা গ্রহাণুর শনাক্ত করেছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম ওল্ডরয়েড বলেন, ‘আমরা নতুন এই বস্তুটিকে বেশ সক্রিয় দেখছি। সবচেয়ে বেশি সক্রিয় অবস্থায় দেখা যায়, যখন এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান করে। ২০১৬ সালের মার্চ ও ২০২০ সালের এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় অবস্থায় দেখা গেছে। সেই সময় এই গ্রহাণুর কার্যকলাপে বেশ পরিবর্তন আসে। সম্ভবত সূর্যের তাপে গ্রহাণুর উদ্বায়ী কঠিন যৌগগুলো গ্যাসে পরিণত হলে ধূমকেতুর মতো আচরণ করে। ডার্ক এনার্জি ক্যামেরায় তোলা বিভিন্ন গ্রহাণুর ছবি বিশ্লেষণ করে নতুন ধুমকেতুরুপি গ্রহাণুর খোঁজ পাওয়া গেছে।’
বৃহস্পতি গ্রহ ও মঙ্গল গ্রহের মাঝখানে অসংখ্য গ্রহাণু অবস্থান করছে। কোয়াসি-হিলডাস বৃহস্পতি গ্রহের কাছাকাছি কক্ষপথে অবস্থিত গ্রহাণু গোষ্ঠী। এখানে প্রায় ৩০০টি গ্রহাণুর অবস্থান, যার মধ্যে মাত্র কয়েকটি সক্রিয় বলে মনে করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মধ্যে একটি গ্রহাণুকে ধূমকেতুর মতো আচরণ প্রদর্শন করতে দেখা গেছে। সাধারণভাবে বলা হয়, গ্রহাণু বা অ্যাস্টেরয়েড প্রধানত পাথুরে মহাজাগতিক বস্তু, যা কোন তারাকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। জনপ্রিয় গ্রহাণুর মধ্যে সাইকি, সেরেস, প্যালাস অন্যতম। অন্যদিকে, ধূমকেতু ধুলো, বরফ আর গ্যাসের তৈরি বিশেষ ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস বরফ, ধুলা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথর দ্বারা গঠিত। ধূমকেতু প্রস্থে কয়েক শ মিটার থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়। তাঁদের লেজ দৈর্ঘ্যে কয়েক শ কোটি কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। বিখ্যাত ধূমকেতুর মধ্যে হ্যালির ধূমকেতু অন্যতম।
সূত্র: নেচার