লিথিয়ামনির্ভর নন-অ্যাকুয়াস রেডক্স ফ্লো ব্যাটারির প্রতীকী ছবি
লিথিয়ামনির্ভর নন-অ্যাকুয়াস রেডক্স ফ্লো ব্যাটারির প্রতীকী ছবি

সৌরবিদ্যুত ধারণ করতে সক্ষম শক্তিশালী ব্যাটারি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা

নব্বইয়ের দশকে আমরা প্রায় সবাই ঘড়ি ও ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতাম। এখন সেই চল না থাকলেও ঘড়ি ও ক্যালকুলেটরে সোলার প্যানেলের মতো ক্ষুদ্র একটি অংশ ঠিকই রয়েছে। এই প্যানেলের মাধ্যমেই সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে ঘড়ি ও ক্যালকুলেটরের ব্যাটারি চার্জ করা হয়। বর্তমানে বিভিন্ন কাজে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়লেও আগামীর পৃথিবী যেন টেকসই হয়, সে জন্য বিজ্ঞানীরা দিনরাত কাজ করছেন। এমনই এক বিজ্ঞানী জিমি জিয়াং। ভবিষ্যতে সব বাসাবাড়িতে ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ধারণ করতে সক্ষম শক্তিশালী ব্যাটারি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে একদল গবেষককে নিয়ে কাজও শুরু করেছেন জিমি জিয়াং। এরই মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল নবীন বিজ্ঞানী লিথিয়ামনির্ভর নন-অ্যাকুয়াস রেডক্স ফ্লো ব্যাটারি উদ্ভাবন করেছে। তাদের দাবি, নতুন ধরনের এই ব্যাটারি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

রেডক্স ফ্লো ব্যাটারির ইলেকট্রো কেমিক্যাল সেলে রাসায়নিক শক্তি মূলত দুটি কেমিক্যাল উপকরণ থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রচলিত ব্যাটারিতে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চাপের জন্য মধ্যবর্তী পর্দা বা মেমব্রেন বিশাল জায়গা দখল করে রাখে। নতুন উদ্ভাবিত ব্যাটারিতে মেমব্রেন না থাকায় উৎপাদনে খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি উচ্চমাত্রার ভোল্টেজ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে গবেষক দলের সদস্য জ্যাক ম্যাকগ্রাথ বলেন, ‘মেমব্রেনবিহীন ব্যাটারি আকারে ছোট হলেও এর মাধ্যমে আপনি বেশি শক্তি পাবেন। মেমব্রেন ছাড়া ব্যাটারি তৈরির কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ ৩০ ভাগ কম হচ্ছে।’

নেচার কমিউনিকেশনস সাময়িকীতে নতুন এই ব্যাটারি নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সিনসিনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক সৌমাল্য সিনহা বলেন, ‘আমরা কম খরচে কার্যকর ব্যাটারি তৈরির জন্য কাজ করছি। এরই মধ্যে নতুন নকশা করা ব্যাটারির মেধাস্বত্ব পেতে আবেদনও করা হয়েছ। আগামী ২০ বছরের মধ্যে এই ব্যাটারির কারণে জ্বালানি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে বলে আমরা মনে করছি। প্রচলিত গাড়ির ব্যাটারিতে সালফিউরিক অ্যাসিড ও পানির মিশ্রণ থাকে। এর ফলে ব্যাটারিগুলো দিয়ে বেশি শক্তির কোনো কাজ করা যায় না।’

জিমি জিয়াং বলেন, এ ধরনের আবিষ্কার সবুজ জ্বালানির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ব্যাটারি প্রয়োজনমতো নবায়নযোগ্য শক্তি সংরক্ষণ করতে পারে। পানির ভোল্টেজ সীমা রয়েছে। আর তাই যখন কোনো তরল পদার্থযুক্ত ব্যাটারির ভোল্টেজ ১.৫ ভোল্ট পেরিয়ে যায়, তখন পানি বিশ্লেষিত হয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনে পরিণত হয়। এর ফলে ব্যাটারি বিস্ফোরিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। নতুন এই ব্যাটারি ৪ ভোল্ট পর্যন্ত শক্তি উৎপাদন করতে পারে। সাধারণ ব্যাটারিতে মেমব্রেন-সেপারেটর প্রয়োজন হয়, যা কিছুটা দামি। নতুন ধরনের ব্যাটারিতে এসবের প্রয়োজন না হওয়ায় কম খরচে বেশি শক্তি ধারণ করা যাবে।
সূত্র: কেমইউরোপ ডটকম