শুধু পৃথিবীই নয়, পৃথিবীর বাইরেও মানুষের কারণে আবর্জনা ও বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে। মহাকাশযান থেকে শুরু করে নভোচারীদের ফেলে আসা বিভিন্ন বর্জ্য আমাদের মাথার ওপর উড়ছে। কোনো দেশের সিটি করপোরেশনের সাধ্য নেই, সেই ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার। আর তাই দীর্ঘদিন ধরেই এসব বর্জ্য পরিষ্কারের উপায় নিয়ে গবেষণা চলছে। মহাকাশে থাকা বর্জ্য পরিষ্কারের নতুন একটি পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা।
নতুন পদ্ধতিতে মহাকাশে থাকা ১ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট বর্জ্য বা ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করার পাশাপাশি লেজারের মাধ্যমে সেগুলোর গতিপথ বদলে ধ্বংসের পরিকল্পনা করা হয়েছে। স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) ও মহাকাশযান পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলোও এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে রাজি হয়েছে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মহাকাশ প্রকৌশলের অধ্যাপক নিলটন রেনো বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা আলো বা রাডার সংকেত প্রতিফলিত করে মহাকাশে বর্জ্য বা ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করছি। বর্জ্যের আকার ছোট হলে পৃথিবী থেকে তা শনাক্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয়। সাধারণভাবে ক্রিকেট বলের চেয়ে বড় বস্তু পৃথিবী থেকে শনাক্ত করা যাচ্ছে। স্যাটেলাইট, মহাকাশযান বা বাতিল স্যাটেলাইট থেকে এসব বর্জ্য তৈরি হয়েছে। বর্তমানে মহাকাশে প্রায় ১৭ কোটি টুকরা বর্জ্য ছড়িয়ে রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ১ শতাংশের কম বর্জ্য শনাক্ত করা হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে ১ মিলিমিটারের চেয়েও ছোট বর্জ্য বা ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা যাচ্ছে। এ প্রকল্পের সঙ্গে সামরিক গবেষণা সংস্থা ব্লু হ্যালো ও আলাস্কার ফেয়ারব্যাঙ্কস বিশ্ববিদ্যালয়ও কাজ করছে।’
মহাকাশের আবর্জনা দেখতে যত ছোট, ততই ভয়ংকর বলা যায়। বিপজ্জনক সব বর্জ্য প্রতি ঘণ্টায় ২২ হাজার মাইল গতিতে ছুটছে। আর তাই মহাকাশের ধ্বংসাবশেষ বা বর্জ্যের কারণে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ছোট বর্জ্যের টুকরাগুলো মহাকাশযানের ক্ষতি করতে পারে, যে কারণে বর্জ্য অনুসন্ধান করা গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানের জন্য এসব বর্জ্য অপসারণে কাজ করছেন গবেষকেরা। গবেষকেরা মনে করছেন, পৃথিবীর কক্ষপথ ধীরে ধীরে বিশৃঙ্খল হয়ে উঠছে। ফলে স্যাটেলাইটের নিরাপত্তা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। মহাকাশের বর্জ্য বা ধ্বংসাবশেষের টুকরাগুলোর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটে। এ কারণে বড় বর্জ্যগুলো ভেঙে ছোট হয়ে যায়, যা সহজে শনাক্ত করা যায় না। অনেক বিশেষজ্ঞের ভয় ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ বেশি মাত্রায় বাড়তে পারে। এভাবে সংঘর্ষ হতে থাকলে জিপিএস, মুঠোফোনের ডেটা, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের স্যাটেলাইটসহ যোগাযোগের স্যাটেলাইটগুলো ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে।
জলবায়ুবিজ্ঞানী মোজতবা আখাওয়ান-তাফতি বলেন, ‘যখন চার্জযুক্ত গ্যাস ও ধ্বংসাবশেষের টুকরা মেঘের মতো ছড়িয়ে পড়ে, তখন বিদ্যুতের মতো শক্তি উৎপন্ন হয়ে স্থির স্ফুলিঙ্গের সংকেত তৈরি হয়। মহাকাশে যখন অ্যালুমিনিয়ামের দুটি টুকরার মধ্যে সাধারণ গতিতে সংঘর্ষ হয়, তখন শক্তিশালী প্রভাব দেখা যায়। সেই প্রভাব ২৬ মিটার ডিশ ও রেডিও রিসিভারের মাধ্যমে টের পাওয়া যায়। সামান্য সংঘর্ষে শক্তিশালী একটি বৈদ্যুতিক বিস্ফোরণ দেখা যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকেও সেই সংঘর্ষ শনাক্ত করা সম্ভব।’
সংঘর্ষের মাত্রা অনুসারে বৈদ্যুতিক সংকেত তরঙ্গের বিভিন্ন রূপ দেখা যায়। বর্তমানে নাসার ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংকেতগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন গবেষকেরা। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও নাসার এমেস রিসার্চ সেন্টারে হাইপারভেলোসিটি পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করছে।
এ ধরনের পরীক্ষায় মহাকাশ ধ্বংসাবশেষ থেকে উৎপন্ন বৈদ্যুতিক সংকেত শনাক্ত করার মাধ্যমে তথ্যাদি সংগ্রহ করা হবে। বর্জ্য ও ধ্বংসাবশেষ দেখতে কেমন, তা জানবেন গবেষকেরা। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী আখাওয়ান-তাফতি বলেন, ‘আমরা জানতে চাই কোন বর্জ্য কেমন, শক্ত না নরম। এ পদ্ধতিতে বর্জ্য কীভাবে প্রদক্ষিণ করে, আর কতটা ক্ষতিকর, তা-ও জানতে পারব।’
সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ
https://phys.org/news/2023-12-tracking-undetectable-space-junk.html