জেপিজি, এমপিফোরসহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ফাইল ফরম্যাটের কথা আমরা সবাই জানি। ইন্টারনেটে ডকুমেন্ট, ছবি, ভিডিও চিত্রসহ বিভিন্ন ফাইল নির্ধারিত ফরম্যাটে রূপান্তর করা হয় ব্যবহারের সুবিধার জন্য। এইচসিটিআই নামের নতুন এক ফাইল ফরম্যাট নিয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা। এই ফাইল ফরম্যাটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ডকুমেন্ট বা ছবির মতো ইন্টারনেটে স্পর্শ পাঠাতে সুযোগ করে দিবে। স্পর্শপ্রযুক্তি বা হ্যাপটিকস টেকনোলজির জন্য ব্যবহৃত নতুন কোডেক টেলিস্বাস্থ্য ও অনলাইন গেমিংয়ে বিপ্লব তৈরি করবে বলে আশাবাদী গবেষকেরা। ইন্টারনেটে এখন সব করা গেলেও ডিজিটালভাবে স্পর্শের অনুভূতি পাওয়ার সুযোগ নেই, সেই বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নতুন ফাইল ফরম্যাট তৈরি করা হচ্ছে।
দূরনিয়ন্ত্রিত অস্ত্রোপচার ও অনলাইন গেমিংয়ে স্পর্শের অনুভূতি মিলবে এই ফাইল ফরম্যাটের মাধ্যমে। গবেষকেরা হ্যাপটিক কোডেক ফর দ্য ট্যাকটাইল ইন্টারনেট বা এইচসিটিআই স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছেন, যা হ্যাপটিক তথ্যকে ডেটা প্যাকেটের মাধ্যমে নেটওয়ার্কে পাঠানোর সুযোগ করে দেয়। এই ফাইল পাঠাতে খুব বেশি পরিমাণ ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হয় না। ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্স স্ট্যান্ডার্ড অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণাপত্রে এ বিষয়ে বিস্তারিত রূপরেখা প্রকাশ করা হয়েছে।
জার্মানির মিউনিখের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি টিইউএমের বিজ্ঞানী একহার্ড স্টেইনবাচ বলেন, বর্তমানে দূরবর্তী সংযোগের মাধ্যমে স্পর্শকাতর প্রতিক্রিয়া প্রেরণ করার জন্য অনেক ডেটার প্রয়োজন হয়। একটি রোবট আর্ম বা বাহু চালাতে প্রতি সেকেন্ডে চার হাজার বার ডেটা প্যাকেট পাঠাতে হয়। বাস্তব উপায়ে কাজ করতে শক্তিশালী ডেটা প্রেরণ নিশ্চিত করতে হয়। এতে নেটওয়ার্কের ওপর চাপ তৈরি হয়। এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এইচসিটিআই মান ব্যবহার করা যাবে। অনেকটা মানুষের মতো স্পর্শের অনুভুতি মিলবে। জেপিজি, এমপিথ্রি, এমপিইজির মতো ফরম্যাটের অনেক অ্যাপ্লিকেশন আছে। এখন নতুন হ্যাপটিক বা স্পর্শসংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশন তৈরির সুযোগ আসবে।
সাধারণ ফাইল ফরম্যাটে কোডেকের মাধ্যমে ডেটা ইন্টারনেটে বা অনলাইনে একমুখীভাবে পাঠানো হয়। স্পর্শসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি বা হ্যাপটিক প্রতিক্রিয়া দূরবর্তীভাবে কার্যকর হওয়ার জন্য দ্বিমুখী যোগাযোগ প্রয়োজন হয়। আর সঙ্গে থাকতে হয় উচ্চ ব্যান্ডউইথ। বর্তমান প্রযুক্তির মাধ্যমে রোবট পরিচালনা করার সময় অনেক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। আলোর গতিতে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তথ্য পাঠানো হলেও এক মিলি সেকেন্ডে সর্বাধিক ৩০০ কিলোমিটার গতিতে তথ্য পাঠানো যায়। নতুন ফাইল ফরম্যাটে তথ্য পাঠাতে ট্রান্সমিশন সময়ের হ্যাপটিকস ডেটা প্যাকেট জার্মানি থেকে জাপানে পাঠাতে মাত্র ৩০ মিলি সেকেন্ড সময় নিবে। তথ্য পাঠাতে বিলম্ব হয় কিছুটা। নতুন ফরম্যাট এইচসিটিআই স্ট্যান্ডার্ডের মাধ্যমে দ্রুত এই তথ্য পাঠানোর সুযোগ তৈরি হবে। এই ফাইল ফরম্যাট ভবিষ্যতের বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের সুযোগ আছে। টেলিসার্জারিতে আমূল পরিবর্তন আসবে। এই ফরম্যাটের মাধ্যমে রোবট দিয়ে এক মহাদেশের বিশেষজ্ঞ সার্জন অন্য মহাদেশে অপারেশন করতে পারবেন সহজেই।
হ্যাপটিক টেকনোলজিনির্ভর এই ফাইল ফরম্যাটের মাধ্যমে দুজন অনলাইন খেলোয়াড় করমর্দনের মতো শারীরিক অনুভূতি প্রকাশ করতে পারবেন। নতুন এই ফাইল ফরম্যাট ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি ও অগমেন্টেড রিয়েলিটির হেডসেটে ভিন্ন অভিজ্ঞতা তৈরি করবে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স