জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে চলছে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান প্রকল্পের প্রদর্শনী
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে চলছে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান প্রকল্পের প্রদর্শনী

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ

খুদে বিজ্ঞানীদের পদচারণে মুখর বিজ্ঞান জাদুঘর চত্বর

স্টেশনে ঢুকতে  কাউকে টিকিট দেখাতে হবে না। ডিজিটাল কার্ড যন্ত্রে পাঞ্চ করে ঢুকতে পারবেন স্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমেই কণ্ঠ–নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে কর্মস্থলে যেতে পারছেন। অফিসে ভূমিকম্পের সতর্কসংকেত বেজে উঠলেই সবাই ভবন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। কৃষক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি দিয়ে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করছেন। বাইকের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আগে থেকেই সংকেত দিচ্ছে স্মার্ট হেলমেট। এসব কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির কল্পনা নয়। দেশের খুদে বিজ্ঞানীদের একেকটি প্রকল্প এগুলো। এমন ১৫৫টি প্রকল্প নিয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাছাই হয়ে সারা দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ৪৪তম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের ছোট বর্ণনা এটি।

গতকাল সোমবার থেকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের আয়োজনে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিন দিনের এই জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে সারা দেশ থেকে অংশ নিচ্ছে প্রায় ৭০০ প্রতিযোগী। উৎসবে তারা তুলে ধরছে নিজেদের সেরা উদ্ভাবন। এসব উদ্ভাবনের পাশাপাশি এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সপ্তম জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ও বিজ্ঞান কুইজ প্রতিযোগিতাও। মেলা উপলক্ষে  রাজধানীর জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স ভবনে স্থাপন করা হয়েছে স্টলগুলো।

মাদারীপুরের ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে ‘শেখ রাসেল স্মার্ট সিটি’ প্রকল্প নিয়ে। দলনেতা সুমাইয়া রহমান জানান, একটি স্মার্ট সিটির সবকিছুই আমরা তুলে ধরছি আমাদের  প্রকল্পে। এই শহরে কোনো দেয়াল থাকবে না। দেয়াল ছাড়াই সেন্সরের মাধ্যমে বাড়ির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যাবে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা প্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে কারও সাহায্য ছাড়াই যেতে পারবেন সব খানে। রয়েছে সৌরশক্তি থেকে স্বয়ংক্রিয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা কীভাবে করা যাবে। ঘরের বাতি ও ফ্যান আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, সেখানে বসেই বন্ধ করতে পারবেন। ভূমিকম্প হলেই দ্রুত সংকেত দেবে স্মার্ট সিটির বাসিন্দাদের। বন্যার পানিতে বসবাসের জন্য রয়েছে ঘর। রয়েছে স্বয়ংক্রিয় বায়োগ্যাস প্রকল্প।

সিলেটের স্কুলছাত্রী দেখাচ্ছে কচুরিপানা থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রকল্প

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট সরকারি শামসুর রহমান কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আল আমিন ও মো. ইসমাইল হোসেনের প্রকল্পের নাম ‘সৌর বিদ্যুচ্চালিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়েস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট মেথড’। বরগুনা সায়েন্স সোসাইটি ‘থার্মো ইলেকট্রিক’ নামে একটা প্রকল্প নিয়ে এসেছে। প্রকল্পের দলনেতা আকিল আহমেদ বলেন, থার্মো ইলেকট্রিক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমরা কোনো যন্ত্রের উৎপন্ন তাপ থেকে সরাসরি বিদ্যুতের রূপান্তর করতে পারবে।

সিলেটের স্কলার্সহোম গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী নাজিরা বিনতে নোমান ‘কচুরিপানা থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন’ বানিয়েছে। সে  জানায়, বাজার থেকে যে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনি, তার চেয়ে আমাদের উদ্ভাবিত ন্যাপকিনের দাম অনেক কম। তাই আমরা এ ন্যাপকিন নিয়ে এসেছি।’

দুই ছাত্রীর ‘শেখ রাসেল স্মার্ট সিটি’ প্রকল্প

প্রতিযোগিতা ঘুরে দেখা গেছে, তরুণ বিজ্ঞনীরা নানারকম সৃজনশীল বৈজ্ঞানিক প্রকল্প বা মডেল উপস্থাপন করছে। এর মধ্যে রয়েছে অগ্নিনির্বাপণ, স্মার্ট কৃষি, সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ, পরিবেশদূষণরোধ, জলবায়ু পরিবর্তন, রোবোটিকস, সবুজ নগরায়ণ, চিকিৎসাব্যবস্থাসহ অসংখ্য প্রকল্প।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা সম্পর্কে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা হাদিসুর রহমান বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে এ রকম বিজ্ঞান মেলা। বিশেষ করে তরুণদের জ্ঞানচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে এবং তাঁদের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে বিকশিত করার অপূর্ব সুযোগ এ মেলা।

ডিজিটাল দেখাচ্ছে দুই ছাত্র

এবারের প্রতিযোগিতা ৪৯৩টি উপজেলা, পরবর্তী সময়ে ৬৪টি জেলায় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা, জেলা এবং সর্বশেষ বিভাগ পর্যায়ে বিজয়ীরা ৪৪তম জাতীয় বিজ্ঞান সপ্তাহের কেন্দ্রীয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে।

আগামীকাল বুধবার শেষ হবে এই আয়োজন। পুরস্কার প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

একই সঙ্গে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের আয়োজন

গতকাল সোমবার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্বোধনী দিনে বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করা হয়। অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সমাধান এই প্রকল্পে

তরুণ শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় মনোনিবেশের আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেছেন, ‘শুধু চিকিৎসক, গবেষক বা বিজ্ঞানী হওয়াই জীবনের সার্থকতা নয়। জীবন চর্চায় সততা ও নৈতিকতা না থাকলে ডিগ্রি বা জ্ঞান অর্জন বৃথা। সৎ প্রকৌশলী, সৎ চিকিৎসক, সৎ বিজ্ঞানী কিংবা সৎ প্রশাসক না হলে বিজ্ঞানচর্চার সুফল পাওয়া যাবে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচুর মেধা ছড়িয়ে আছে, সে মেধাকে উদ্ভাবনী কাজে লাগিয়ে পরিবেশদূষণ রোধ, খাদ্যে ভেজালের ঘটনা প্রতিরোধসহ জীবনমান উন্নয়ন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে যথাযথ প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে।’