যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কিউরিওসিটি রোভার দীর্ঘদিন ধরে মঙ্গল গ্রহের পথেপ্রান্তরে নানা রহস্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিউরিওসিটি রোভারের কেমক্যাম যন্ত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে আগে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশ কেমন ছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। এ জন্য কেমক্যাম যন্ত্রের মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহের পাথরের মৌলিক গঠনের পরিমাণ নির্ণয় করছেন তাঁরা। সম্প্রতি মঙ্গল গ্রহের গ্যালে ক্রেটার বা খাদের শিলা বিশ্লেষণ করে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজের খোঁজ মিলেছে। আর তাই শিলাগুলো পলিসমৃদ্ধ নদীতে ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জিওফিজিক্যাল রিসার্চ প্ল্যানেটস নামের একটি জার্নালে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
লস আলামোস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশনের বিজ্ঞানী প্যাট্রিক গাসদা বলেন, মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড তৈরি করা কঠিন। সেখানে এই পদার্থের খোঁজ পাব, তা আমরা আশা করিনি। পৃথিবীতে সালোকসংশ্লেষণের কারণে বায়ুমণ্ডলে বেশি অক্সিজেন তৈরি হয়। ম্যাঙ্গানিজ অক্সিডেশন এখানে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। মঙ্গলে গ্রহে জীবনের কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। মঙ্গল গ্রহের প্রাচীন বায়ুমণ্ডলে কীভাবে অক্সিজেন উৎপন্ন হতো, তা-ও আমরা জানি না। সেখানে কীভাবে ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড তৈরি হয়েছিল আর শিলায় ঘনীভূত হয়েছিল তার খোঁজ পাওয়া আমাদের জন্য সত্যিই বিস্ময়কর। নতুন এই তথ্য মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল বা পৃষ্ঠে পানি থাকার বিষয়টি ইঙ্গিত করে।
রোভার যে পাললিক শিলা বিশ্লেষণ করেছে, তা বালি, পলি ও কাদার মিশ্রণে তৈরি ছিল। বিজ্ঞানী গাসদা বলেন, অনেক আগে মঙ্গল গ্রহে হয়তো জীবন উপস্থিতি ছিল। হ্রদের তীরে থাকা শিলাতে ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি গ্রহটিতে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল বলে ইঙ্গিত করে। কেমক্যাম যন্ত্রের প্রধান বিশ্লেষক নিনা লানজা বলেন, প্রাচীন শিলার তথ্যের মাধ্যমে আমরা মঙ্গল গ্রহে থাকা হ্রদের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে পারছি। পৃথিবীতে বিভিন্ন হ্রদের তীরে ম্যাঙ্গানিজসমৃদ্ধ শিলার দেখা মেলে। হয়তো আমাদের মতোই পরিবেশ ছিল মঙ্গল গ্রহে।
সূত্র: ফিজিস ডট অর্গ