একটু বৃষ্টিতেই রাজধানী ঢাকার অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। ফলে পানি জমে জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। এ সমস্যা শুধু পৃথিবীতেই নয়, মঙ্গল গ্রহেও নাকি একসময় পানি জমে যাওয়ার পাশাপাশি বন্যার দেখা মিলত। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মঙ্গলযান পারসিভারেন্স রোভারের নেভিগেশন ক্যামেরায় তোলা ছবি ও বিভিন্ন পাথরের তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নাসা জানিয়েছে, বহুকাল আগে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে পানির অস্তিত্ব ছিল। লাল গ্রহটিতে বন্যার ঘটনা নিয়মিত ছিল বলেও প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকেরা। মঙ্গলের শুকিয়ে যাওয়া নদী ও বদ্বীপ জেজিরো ক্রেটারের ছবি থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন গোলাকার পাথর বিশ্লেষণ করে বোঝা যাচ্ছে, প্রায় ১০০ কোটি বছর আগে প্রবল বন্যার পানিতে এসব পাথর ভেসে আসে।
পারসিভারেন্স রোভারের সহযোদ্ধা আরেক রোভার কিউরিওসিটি সম্প্রতি মঙ্গলে পানির খোঁজ দিয়েছে। জেজিরো ক্রেটার থেকে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মাইল দূরে কিউরিওসিটি যানটি কাজ করছে। অনেক আগে, গ্রহাণুর আঘাতে মঙ্গল গ্রহের পর্বত মাউন্ট শার্প থেকে কাদা ও পাথর গড়িয়ে নিচের দিকে চলে আসে। সেই সব পাথর জেজিরো এলাকায় জমা হয়। সেখানে একসময় স্রোতস্বিনী আর ২২ মাইল প্রশস্ত হ্রদের উপস্থিতি ছিল। এই অঞ্চলের আর্দ্র মাটিতে প্রাণের বিকাশের সম্ভাবনা ছিল বলে গবেষকেরা মনে করেন। এলিসিয়াম প্ল্যানিটিয়া আগ্নেয়গিরি অতীতে বেশ সক্রিয় ছিল। গবেষকেরা ধারণা করছেন, আগ্নেয়গিরিটি এখনো সক্রিয় আছে।
ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি ল্যাবরেটরির গবেষকেরা মঙ্গলের একটি ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি করেছেন। এলিসিয়াম প্ল্যানিটিয়ার আগ্নেয়গিরির লাভাপ্রবাহের ত্রিমাত্রিক চিত্র তৈরি করেন তাঁরা। মঙ্গলের বুকে যে লাভা দেখা যায়, তা সম্ভবত প্রায় ১০ লাখ বছর আগে এক বিস্ফোরণের পরে বিস্তৃত হয়।
পারসিভারেন্স রোভারের চোখে বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহের রহস্যময় অতীতের ধাঁধার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন। গবেষণার অংশ হিসেবে জেজিরো ক্রেটার খাদ থেকে ২৩টি পাথরের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের এক সভায় বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহের বন্যার খবর জানান। মঙ্গল গ্রহের পাথরের নমুনায় সিলিকা পাওয়া গেছে। সিলিকা জৈব অণুর বিকাশ ও জৈবিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।
ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনার নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী মরগান ক্যাবল বলেন, ‘পৃথিবীতে সিলিকা অনেক জায়গায় দেখা যায়। সিলিকা পাওয়া যায়, এমন এলাকায় প্রাণের খোঁজ মিলতে পারে। কিছু শিলায় ফসফেটের সঙ্গে লোহার উপস্থিতি দেখা যায়। বিভিন্ন নমুনায় কার্বোনেটও পাওয়া গেছে। এই খনিজ অতীতের পানিসমৃদ্ধ পরিবেশকে নির্দেশ করে। এসব শিলার মাধ্যমে মঙ্গল গ্রহের পরিবেশগত অবস্থা সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী কেন ফার্লে বলেন, ‘জেজিরো ক্রেটার খাদটি দেখতে বদ্বীপের মতো দেখায়। এ খাদ আসলে বড় একটি হ্রদ ছিল। হ্রদটিতে বাসযোগ্য পরিবেশ থাকার সম্ভাবনা আছে। বদ্বীপের বিভিন্ন পাথর ভূতাত্ত্বিক রেকর্ডের মতো কাজ করছে।’
সূত্র: ম্যাশেবল ও সিএনএন