টাইটান সাবমার্সিবল
টাইটান সাবমার্সিবল

সাবমার্সিবল কী, টাইটান কেন সাবমেরিন নয়

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের দেখার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা টাইটান নিখোঁজ হয়। যাত্রা শুরুর পৌনে দুই ঘণ্টার মাথায় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় টাইটানের। শেষ পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে সন্ধান মিলেছে টাইটান ডুবোজাহাজের ধ্বংসাবশেষের। সমুদ্রের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে থাকা টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষের পাশেই পাওয়া গেছে টাইটান ডুবোজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ। এ ঘটনায় আমাদের সামনে ‘সাবমার্সিবল’, ‘সাবমেরিন’ শব্দগুলো আসছে। জেনে নেওয়া যাক, শব্দ দুটি কীভাবে আলাদা এবং টাইটানের সঙ্গে সাবমেরিনের পার্থক্য কী?

সাবমার্সিবল কী, এর সঙ্গে সাবমেরিনের পার্থক্য

অনেক জায়গায়, টাইটানকে সাবমেরিন হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে টাইটান মূলত সাবমার্সিবল। ‘সাবমেরিন’ ও ‘সাবমার্সিবল’—এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, একটি সাবমেরিনের বন্দর ছেড়ে গিয়ে আবার নিজে থেকে বন্দরে ফিরে আসার পর্যাপ্ত শক্তি রয়েছে। অন্যদিকে সাবমার্সিবলের শক্তি সীমিত। এটি পরিচালনার জন্য একটি মূল নৌযানের প্রয়োজন হয়, যা সাবমার্সিবলকে পুনরুদ্ধার করতে পারে। অনেকটা স্কুবা ডাইভারের মতোই। স্কুবা ডাইভারকে যেমন সমুদ্রের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর তাঁরা নিজেদের মতো খোঁজ করতে থাকেন। পরে জাহজাটি আবার তাঁদের বন্দরে নিয়ে আসে। ঠিক তেমন।

টাইটান কী

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া ওশানগেটের ডুবোজাহাজটির নাম টাইটান। এটি মনুষ্যচালিত একটি সাবমার্সিবল। এটিতে চালকসহ পাঁচজন থাকেন। টাইটান সমুদ্রের চার হাজার মিটার পর্যন্ত গভীরে যেতে পারে। যেখানে জরিপ করতে পারবে, কোনো কিছু দেখতে পারবে এবং গবেষকেরা গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। এমনকি এটির মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ধারণ এবং গভীর সমুদ্রে পরীক্ষার কাজও করা যায়।

ওশানগেট বলছে, হালকা রাখতে এবং অন্যান্য সাবমার্সিবলের চেয়ে আলাদা গতিতে আলাদা রাখতে টাইটানে আধুনিক উপকরণের উদ্ভাবনী ব্যবহার করা হয়েছে। এতে কার্বন ফাইবার ও টাইটানিয়াম ব্যবহৃত হয়েছে।

ইনোভেটিভ কম্পোজিট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তথ্য অনুসারে, কার্বন ফাইবার একধরনের পলিমার, যা হালকা হওয়া সত্ত্বেও বেশ শক্তিশালী। এটি ইস্পাতের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি শক্তিশালী এবং দ্বিগুণ শক্ত হতে পারে। আর টাইটানিয়াম স্টিলের মতো শক্তিশালী কিন্তু প্রায় ৪৫ শতাংশ হালকা। এটি অ্যালুমিনিয়ামের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী, তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে মাত্র ৬০ শতাংশ ভারী।

ওশানগেটের তথ্য অনুসারে, টাইটানের দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৭ মিটার (প্রায় ২২ ফুট)। এর প্রস্থ ২ দশমিক ৮ মিটার (৯ দশমিক ২ ফুট) এবং উচ্চতা ২ দশমিক ৫ মিটার (৮ দশমিক ২ ফুট)। এর মোট ওজন ১০ হাজার ৪৩২ কেজি এবং ৬৮৫ কেজি পর্যন্ত ভার বইতে পারে। এর চারটি ইনারস্পেস ইলেকট্রিক থ্রাস্টার পানির নিচে জাহাজটিকে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় প্রায় ৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে সাহায্য করে। এতে ৫ জন আরোহী সর্বোচ্চ ৯৬ ঘণ্টা লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের সহায়তা পাবেন।