২০২৩ সালকে জলবায়ু পরিবর্তনের ইতিহাসে আরেকটি দুর্যোগপূর্ণ বছর বলে মনে করা হয়। সাধারণভাবে মহাসাগরগুলো নিয়মিত তাপ শোষণ করে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্য এই তাপ শোষণের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন গবেষণা বলছে, পাঁচ বছর ধরে সমুদ্রের উষ্ণতা ধরে রাখার ক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
বিষয়টিকে বিশ্বের জলবায়ুর ইতিহাসে একটি উদ্বেগজনক মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। চীনের বেইজিংয়ের চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব অ্যাটমোস্ফেরিক ফিজিকসের বার্ষিক বিশ্লেষণে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ৫টি দেশের ১৯টি সংস্থার ৩৪ জন বিজ্ঞানী সম্মিলিতভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করেন।
২০১৯ সাল থেকে মহাসাগরগুলো রেকর্ড হারে উষ্ণ হচ্ছে। এ বিষয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানী ও গবেষণা দলের প্রধান চেং লিজিং বলেন, এমন ঘটনার জন্য মানুষই বেশি দায়ী। বিভিন্ন কারণে গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মহাসাগরের উষ্ণতা বাড়ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা বেশি থাকবে, ততক্ষণ মহাসাগরগুলো শক্তি শোষণ করতে থাকবে। এতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনা চলতেই থাকবে।
২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে সমুদ্রের প্রথম ২ হাজার মিটার এলাকায় সঞ্চিত তাপ ১৫ জেটাজুল (শক্তি পরিমাপের একক) বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এই মাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯ জেটাজুল। জাপানের হিরোশিমাতে যে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়, তেমন পাঁচ থেকে ছয়টি বোমার সমান তাপ সমুদ্র প্রতিদিন ধারণ করছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যে লিভারপুলের ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টারের সমুদ্রবিজ্ঞানী স্বেতলানা জেভরেজেভা বলেন, এই প্রবণতা খুবই উদ্বেগজনক। সাগরের উষ্ণায়নের রেকর্ড টানা পঞ্চম বছর ভেঙেছে। সমুদ্রের তাপমাত্রার সামান্য পরিবর্তনও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি ও উষ্ণতার কারণে সমুদ্র প্রসারিত হচ্ছে। সমুদ্রের দ্রুত উষ্ণতা চরম আবহাওয়ার মতো বিষয়গুলোকে তীব্র করে তুলছে। মহাসাগরগুলো বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে। বৃষ্টি, খরা ও বন্যার মতো বিষয়গুলোর চক্র ভেঙে যাচ্ছে।
কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক পরিবেশবিদ উইলিয়াম চেউং বলেন, সমুদ্রের উষ্ণতা সামুদ্রিক জীবনের ওপর প্রভাব ফেলছে। উষ্ণ মহাসাগর সামুদ্রিক নানা প্রজাতির প্রাণীর প্রজনন ও পরিযায়ী চক্রকে পরিবর্তন করছে। ফলে বিভিন্ন প্রাণীর আকারেও প্রভাব ফেলছে। নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনের ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের হিমবিজ্ঞানী ক্রিস্টিনা হুলবে বলেন, যত দিন বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব বাড়বে, তত দিন বায়ুমণ্ডল ও মহাসাগর উভয়ই উষ্ণ হতে থাকবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে পারলে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রবণতা পরিবর্তন হবে। খুব দেরি হওয়ার আগে উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ বন্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: নেচার