বাংলাদেশ, ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রাচীনকাল থেকেই বাঁশ দিয়ে বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করা হয়। এখন ইউরোপ–আমেরিকার বিভিন্ন দেশও নির্মাণশিল্পে বাঁশের ব্যবহারের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানোর চেষ্টা করছে। গাছের মতো বাঁশ বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কার্বন সঞ্চয় করে। বাঁশের একটি বাগান প্রতি হেক্টরে ৪০১ টন কার্বন সংরক্ষণ করতে পারে।
নেদারল্যান্ডসের আন্তর্জাতিক বাঁশ ও বেত সংস্থা এবং ডেলফ্ট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির তথ্যমতে, চীনের ফারগাছের রোপণে হেক্টরপ্রতি ২৩৭ টন কার্বন সংরক্ষণ করা যায়। এশিয়া অঞ্চলে নির্মাণে বাঁশ ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। গত কয়েক দশকে ইউরোপ–আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাঁশ দিয়ে মেঝে, রান্নাঘরের তৈজসপত্রের মতো জিনিসপত্র তৈরি করা হচ্ছে। বাঁশ আমাদের গ্রহের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদের একটি। কিছু জাতের বাঁশ তো প্রতিদিন এক মিটারের মতো দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
যুক্তরাজ্যের প্রকৌশলী ক্রিস্টোফার ম্যাথিউস বলেন, ‘ভবন নির্মাণে ইউরোপে বাঁশের ব্যবহার কম, পরিচিতিরও অভাব রয়েছে। তবে বিভিন্ন নির্মাণ কাঠামোতে বাঁশের চাহিদা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে পুরো একটি স্কুলের ক্যাম্পাস বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কোস্টারিকার ইয়োগা স্টুডিও, ফিলিপাইনে বড় একটি সেতু বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা যদি ইউরোপে বাঁশের ব্যবহার শুরু করি, তবে প্রাথমিকভাবে তা ব্যয়বহুল হবে। ইউরোপে বাঁশের ব্যবহার বেশি বাড়ালে খরচ কমে আসবে। আর তাই ইউরোপে বাঁশের চাষ করার সুযোগ খুঁজছেন গবেষকেরা। সমস্যা হচ্ছে বাঁশের বিভিন্ন প্রজাতি ইউরোপের শীতল আবহাওয়ায় ভালোভাবে বৃদ্ধি পায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুল অব আর্কিটেকচারের স্থাপত্যের গবেষক ভাবনা শর্মা বলেন, নির্মাণশিল্পে বাঁশ ব্যবহার করা এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। ইউরোপ-আমেরিকায় বাঁশ দিয়ে ভবন নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বামকোর নামের একটি প্রতিষ্ঠান ডেনড্রোক্যালামাস অ্যাসপার বা জায়ান্ট ক্লাম্পিং নামের বাঁশ দিয়ে ভবন নির্মাণ শুরু করেছে। দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়া থেকে বাঁশ আমদানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতে পরীক্ষামূলকভাবে ডেনড্রোক্যালামাস অ্যাসপার বাঁশ চাষের পরীক্ষা চলছে।
সূত্র: বিবিসি