রাতে পথ চলার সময় আকাশে থাকা চাঁদের দিকে তাকিয়ে গুনগুন করে গান গান অনেকেই। কেউ আবার বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বসে জ্যোৎস্নার সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কিন্তু এই চাঁদ হঠাৎ করে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেলে কী হবে, তা কখনো চিন্তা করেছেন? চাঁদ না থাকলে প্রথমেই সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসবে। কারণ, সূর্যের প্রভাবে অন্য রকমের জোয়ার-ভাটা দেখা যাবে তখন। এ জোয়ারের এলোমেলো হিসাবের কারণে উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে প্রতিদিন জোয়ারের ওপর নির্ভর করা বিভিন্ন প্রাণী ধ্বংস হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিঃপদার্থবিদ পল সাটার বলেন, চাঁদ হারিয়ে গেলে পৃথিবী তার অক্ষের ওপর বর্তমানের তুলনায় দ্রুত ঘুরবে। পৃথিবীতে এখন দিন হয় ২৪ ঘণ্টায়, তখন দিন হবে ৬ থেকে ১২ ঘণ্টায়। চাঁদ না থাকলে আমরা কিছুটা বৈচিত্র্যহীন রাতের দেখা পাব। তখন রাত হবে অনেক বেশি অন্ধকার। রাতের আকাশে সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল বস্তু হিসেবে দেখা যাবে শুক্র গ্রহকে। যদিও চাঁদের মতো আকাশ আলোকিত করার জন্য যথেষ্ট নয় শুক্র গ্রহ।
চাঁদ না থাকলে পৃথিবীতে সমুদ্রের জোয়ারের আকারেও পরিবর্তন আসবে। তখন বর্তমানের তুলনায় সমুদ্রে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ উঁচু ঢেউ দেখা যাবে। তখন চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে না; অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সূর্যকে ঢেকে রাখার মতো আর কিছুই থাকবে না। চাঁদ না থাকলে পৃথিবীর অক্ষে কিছুটা পরিবর্তন আসবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অক্ষের অবস্থান পরিবর্তন হবে, যা প্রতিকূল আবহাওয়া তৈরি করবে। চাঁদ না থাকলে পৃথিবী খুব বেশি হেলে যেতে পারে কিংবা খুব কম কাত হতে পারে। তখন কোনো ঋতুর দেখা না-ও পেতে পারি আমরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্য প্রাণী পরিবেশবিদ লরা প্রুগ বলেন,‘ চাঁদ না থাকলে আপনি কিছু পরিবর্তন দেখতে পাবেন। প্রাণীরা ভিন্ন ধরনের আচরণ করবে। চাঁদের আকস্মিক অনুপস্থিতি অন্যান্য প্রাণীকেও বিভ্রান্ত করবে। ২০১৩ সালের অ্যানিমেল ইকোলজি জার্নালের পর্যালোচনায় বলা হয়, এমন প্রাণী আছে, যারা চাঁদের উপস্থিতির মাধ্যমে প্রতিবেশের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। প্যাঁচা আর সিংহের মতো অনেক শিকারি প্রাণী কার্যকরভাবে শিকার করার জন্য চাঁদের আলোর ওপর নির্ভর করে। চাঁদ না থাকায় তাদের খাবার খুঁজে পেতে সমস্যা হবে।’
সূত্র: স্পেস ডটকম ও পপসাই