আমরা অনেক বামন গ্রহের গল্প শুনেছি, কিন্তু বামন ছায়াপথের কথা তেমন শোনা যায় না। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তথ্য নিয়ে পার্লসডিজি নামের চমকানো এক ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির খোঁজ পেয়েছেন জ্যোতির্বিদেরা। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী টিম কার্লেটনের নেতৃত্বে একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী একটি বামন ছায়াপথ আবিষ্কার করেছেন।
প্রাথমিকভাবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের চোখে এই ছায়াপথের কোনো খোঁজ ছিল না। নানা ধরনের গ্যালাক্সি মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা একত্রে আবদ্ধ থাকে। এসব গ্যালাক্সিতে তারা ও গ্রহ থাকে। এ ছাড়া নাক্ষত্রিক ধুলা ও গ্যাসের মেঘের পাশাপাশি ডার্ক ম্যাটার থাকে। বামন গ্যালাক্সি মহাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এসব গ্যালাক্সির উজ্জ্বলতা বেশ কম। এসব বামন ছায়াপথে ১০ কোটির কম তারা রয়েছে। আমাদের নিজেদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়েতে আছে ২০ হাজার কোটি তারা।
আগে ছায়াপথের যে তথ্য ছিল, তার মধ্যে নতুন বামন ছায়াপথের কোনো তথ্য ছিল না। নতুন বামন ছায়াপথ আলট্রা-ডিফিউজ গ্যালাক্সি শ্রেণির। গবেষকেরা প্রাইম এক্সট্রাগ্যালাকটিক এরিয়া ফর রিওনাইজেশন অ্যান্ড লেন্সিং সায়েন্স বা পার্লস কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছায়াপথের গুচ্ছের খোঁজ পান। সেখানে বামন ছায়াপথ পার্লসডিজির খোঁজ মেলে। বিজ্ঞানীরা যেখানে নজর রাখছিলেন, সেখানে কোনো ছায়াপথ নেই বলে ভাবা হচ্ছিল অনেক দিন।
বামন ছায়াপথের খোঁজ নিয়ে একটি গবেষণা অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে প্রকাশিত হয়েছে। পার্লসডিজি বামন গ্যালাক্সির কোনো স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য প্রথমে নজরে আসেনি। আড়ালেই ছিল এ বামন গ্রহ। এ বামন গ্রহ নিকটবর্তী কোনো ছায়াপথের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না। বামন ছায়াপথটিতে নতুন কোনো তারাও গঠন হচ্ছে না।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী টিম কার্লেটন বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন শান্ত ছায়াপথের আকর্ষণীয় উদাহরণ বলা যায়। এ ধরনের বিচ্ছিন্ন শান্ত বামন ছায়াপথ তুলনামূলকভাবে আগে সত্যিই দেখা যায়নি। গ্যালাক্সি বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের বর্তমান ধারণার কারণে বামন ছায়াপথের অস্তিত্ব আশা করা যায় না। নতুন বামন ছায়াপথ আমাদের বর্তমান তত্ত্বকে উন্নত করতে সাহায্য করবে। সাধারণত বামন ছায়াপথ বাইরে থাকে আর নতুন তারা তৈরি করতে থাকে। খোঁজ পাওয়া বামন ছায়াপথে কোনো নতুন তারা তৈরির নজির নেই।
ছায়াপথের বিবর্তন সম্বন্ধে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণায় ধাক্কা দিচ্ছে নতুন বামন ছায়াপথ। বামন ছায়াপথ বিচ্ছিন্ন ছায়াপথ অবস্থায় থাকে, সেখানে নানা নক্ষত্র গঠন হতে থাকে। আর বিশাল কোন ছায়াপথের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। এই ধারণা নতুন বামন ছায়াপথের জন্য প্রযোজ্য নয়। এ ছায়াপথে সব পুরোনো তারা, কোনো নতুন তারা গঠন হচ্ছে না। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ছবিতে ছায়াপথে পৃথক কিছু তারা দেখা যায়। এসব তারার তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশ উজ্জ্বল। এই তারার উজ্জ্বলতা বলছে বামন ছায়াপথটি ৯৮ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা বা নিরক্যামের তথ্য আর অ্যারিজোনার লোয়েল ডিসকভারি টেলিস্কোপের ডিভেনি অপটিক্যাল স্পেকট্রোগ্রাফের স্পেকট্রোস্কোপিক তথ্য বিশ্লষেণ করে বামান ছায়াপথের অস্তিত্ব জানা গেছে। অতীতে আবিষ্কৃত ছায়াপথের তথ্যাদি জানতে নাসার গ্যালেক্স ও স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপের মহাফেজখানার ছবি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও স্লোন ডিজিটাল স্কাই সার্ভে ও ডার্ক এনার্জি ক্যামেরা লিগ্যাসি সার্ভের তথ্যাদিও বামন ছায়াপথ সন্ধানে ব্যবহার করা হয়।
নির্দিষ্ট নক্ষত্র শনাক্ত করার জন্য তারার অন্তর্নিহিত উজ্জ্বলতা পরীক্ষা করা হয়। টিম কার্লেটন বলেন, বামন ছায়াপথ নিয়ে আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল, তার সম্পূর্ণ বিপরীত তথ্য পাচ্ছি আমরা। নতুন আবিষ্কার অনেক বিচ্ছিন্ন শান্ত ছায়াপথ শনাক্ত করার সুযোগ তৈরি করে দেবে।
সূত্র: ফিজিস ডট ওআরজি