বইয়ের পাতায় উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু নিয়ে আমরা অনেক গল্প পড়েছি। বরফাচ্ছন্ন দুই মেরু নিয়ে কত না রূপকথা। সেই মেরুর অবস্থান বদলে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাধারণভাবে উত্তর মেরু প্রতিবছর প্রায় ১৫ কিলোমিটার গতিতে জায়গা বদল করে। ১৯৯০–এর দশক থেকে এই গতি বেড়েছে। উত্তর মেরু এখন সাইবেরিয়ার দিকে প্রতিবছর প্রায় ৪৫ কিলোমিটার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা চৌম্বকক্ষেত্রের বিপরীত অবস্থান সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছেন। এই অবস্থায় পৃথিবীর চৌম্বকীয় উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অবস্থান পরিবর্তন করে। গত ৭ কোটি ১০ লাখ বছরে এমন প্রাকৃতিক ঘটনা ১৭১ বার ঘটেছে।
আমরা জানি, পৃথিবীর একটি তরল গলিত কেন্দ্র আছে। সেই কেন্দ্রের বাইরে পুরোটাই লোহা ও নিকেল দ্বারা গঠিত। কেন্দ্র উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর মাধ্যমে বিস্তৃত একটি বিদ্যুৎ–চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে। এর মাধ্যমে ক্ষতিকর সৌরকণার বিকিরণ থেকে পৃথিবী রক্ষা পায়। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের যে শক্তি তা নানা কারণে ওঠানামা করে। সৌরঝড়ের কারণে ভূ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্র স্থির থাকে। এতে উপগ্রহ, বিমান, জাহাজ ও গাড়ির নেভিগেশন যন্ত্রে সমস্যা তৈরি হয়। সাম্প্রতিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে চৌম্বকক্ষেত্রের বাঁকবদলের কারণে মেরুর আচরণ বদলে যাচ্ছে। ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ: স্পেস ফিজিকস’ জার্নালে মেরুর আচরণ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির সোয়ার্ম মিশনের লো-আর্থ অরবিট স্যাটেলাইটের তথ্যের মাধ্যমে আর্থ ম্যাগনেটিক ফিল্ড মডেলকে বিশ্লেষণ করছেন। এই মডেলের নাম ইন্টারন্যাশনাল জিওম্যাগনেটিক রেফারেন্স ফিল্ডে ত্রয়োদশ সংস্করণ। গবেষকেরা নিম্ন থেকে মাঝারি মাত্রার ভূ-চৌম্বকীয় অবস্থার মধ্যে পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করেন। প্রায় ৯৮ শতাংশ এলাকাজুড়ে এমন ধরনের ভূ-চৌম্বকীয় প্রভাব থাকে। পৃথিবীর ওপর থেকে উপগ্রহ পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষণ করা হয়। পৃথিবীর চৌম্বক মেরুতে বিভিন্ন পরিবর্তন এসব উপগ্রহ পর্যবেক্ষণ করে। নতুন তথ্য বলছে, উত্তর মেরু প্রতিবছর প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তর-উত্তর পশ্চিমে স্থানান্তরিত হচ্ছে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ইইনিং শি বলেন, ‘আমরা সব সময় উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলকে স্থির মনে করি। প্রতিসাম্য চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বলে অনুমান করি। আসলে দুই মেরু বেশ আলাদা। উত্তর মেরুর অবস্থান প্রায় ৮৪ ডিগ্রি চৌম্বক অক্ষাংশ থেকে ১৬৯ ডিগ্রি চৌম্বক দ্রাঘিমাংশ। দক্ষিণ মেরুর অবস্থান মাইনাস ৭৪ ডিগ্রি থেকে ১৯ ডিগ্রি চৌম্বক দ্রাঘিমাংশ। সোয়ার্ম স্যাটেলাইটের তথ্য বলছে, মেরু চৌম্বকক্ষেত্র গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। চৌম্বকক্ষেত্রের নড়াচড়ার কারণে অনেক জটিলতা তৈরি হতে পারে। আমরা যে জিপিএস ব্যবহার করি তা সঠিকভাবে কাজ না–ও করতে পারে। গুগল ম্যাপ যে দিক দেখায় তার মধ্যে গোলমাল দেখা দিতে পারে।
সূত্র: ফিজিকস ডট অর্গ ও বিবিসি