মেঘের কারণে বেশির ভাগ সময়ই পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ আকাশ ঢাকা থাকে। এর ফলে প্রচলিত স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর সব জায়গার ছবি ভালোভাবে তুলতে পারে না। এ সমস্যা সমাধানে সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার (এসএআর) প্রযুক্তির স্যাটেলাইট তৈরি করেছে আইসাই ও কাপেলা স্পেস নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। এসব স্যাটেলাইট রাডার সিগন্যালের প্রতিধ্বনি পাঠিয়ে মেঘের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠের সর্বশেষ অবস্থার ছবি সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে আকাশে মেঘ থাকলে বা দাবানলের ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে গেলেও ঠিকই ভালো মানের ছবি তুলতে পারে নতুন প্রযুক্তির স্যাটেলাইটগুলো।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক হলি জর্জ স্যামুয়েলস জানিয়েছেন, এসএআর প্রযুক্তির স্যাটেলাইট দিনে বা রাতে উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি তুলতে পারে। এমনকি আকাশে মেঘ থাকলে বা বৃষ্টির সময়ও দারুণ ছবি তুলতে পারে এসব স্যাটেলাইট। প্রচলিত স্যাটেলাইট থেকে অপটিক্যাল ইমেজ পাওয়া গেলেও এসব স্যাটেলাইটে উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে ঘাসের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাওয়া ভেড়ার চলাচলের রাস্তা পর্যন্ত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখা যায়।
এসএআর প্রযুক্তির স্যাটেলাইটের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইসাই-এর যুক্তরাষ্ট্র কার্যালয়ের প্রধান এরিক জেনসেন বলেন, ‘২০১৮ সালের শুরুর দিকে এ ধরনের স্যাটেলাইটের ছোট সংস্করণ তৈরি করা প্রযুক্তিগতভাবে সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছিল। আমরা ২০ বছর আগের তুলনায় ১০০ গুণ কম দামে স্যাটেলাইট তৈরি করছি। চার থেকে পাঁচ গুণ দ্রুততম সময়ে এসব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করছি। ২০২২ সালে এসব স্যাটেলাইট ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের মাত্রা বুঝতে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া হাওয়াইয়ের দাবানলের অবস্থা বুঝতেও সহায়তা করেছে এসব স্যাটেলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানী ক্যাথলিন জোনস বলেন, এসব স্যাটেলাইট সব ধরনের বিপদ দেখতে ব্যবহার করা যায়। শুধু তা–ই নয়, স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে ভালোভাবে বিভিন্ন জলাশয়ের চিত্র সরাসরি দেখার সুযোগ মিলছে। নদীতে তেল নির্গত হলে কোথায় যাচ্ছে, তা শনাক্ত করতে আমরা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি। এখন এসব স্যাটেলাইট নিয়ে মাতামাতি হলেও এই প্রযুক্তি বেশ পুরোনো। ১৯৫৪ সালে প্রথম এই প্রযুক্তির পেটেন্ট গ্রহণ করা হয়। ১৯৬৪ সালে প্রোজেক্ট কুইল নামের এমন একটি স্যাটেলাইট প্রথম উৎক্ষেপণ করা হয়। ব্যয়বহুল বলে এসব স্যাটেলাইট এত দিন ব্যবহারের সুযোগ কম ছিল।
সূত্র: বিবিসি