কেউ যদি আপনাকে ভালোবেসে আপেল দেয়, তাহলে মন খারাপ করবেন? গোলাপের বদলে আপেল পেয়ে মন খারাপ হতেই পারে। বিজ্ঞানের ভাষ্য শুনলে অবশ্য আপনার মন ভালো হতে পারে। আপেল ও গোলাপ দুটিই একই পরিবারের সদস্য। শুধু তা–ই নয়, স্ট্রবেরি পেলেও বিজ্ঞান বলবে আপনাকে গোলাপ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা বাংলা সাহিত্য পড়েন, তাঁদের কাছে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের হিমু চরিত্রটি বেশ রহস্যের বলে মনে হয়। তার চেয়েও আরেক চরিত্র মিসির আলী আরও বেশি রহস্যময়। প্রকৃতি নিয়ে যাঁরা পড়াশোনা করেন, তাঁদের কাছে গোলাপ বেশ রহস্যময় এক নাম।
‘গোলাপ’ শব্দ শুনলেই মনে লাল রঙের ভালোবাসার এক ফুলের চিত্র ফুটে ওঠে।
উদ্ভিদবিজ্ঞানের কড়চা অনুসারে রোজাসিয়া বা গোলাপ সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি পরিবার। ৯০টির বেশি গণ বা জেনারে বিভক্ত। প্রায় আড়াই হাজারের বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ এই গোত্রের অংশ। এই গোত্রের প্রায় সব উদ্ভিদ প্রাথমিকভাবে উত্তর গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে পাওয়া যায়। বিভিন্ন ধরনের আবাসস্থলে দেখা বিভিন্ন গোলাপের প্রজাতি দেখা যায়। চমকের কথা হচ্ছে, আপেল, বাদাম, চেরি, নাশপাতি, রাশবেরি, স্ট্রবেরিসহ অনেক খাদ্যশস্য এই প্রজাতির সদস্য। সেই হিসেবে ভালোবাসার মানুষকে গোলাপ ফুল দেওয়া আর আপেল ফল দেওয়া তো একই গল্প!
রোজাসিয়ার সদস্যরা সাধারণত বৃক্ষ গড়নের হয়। ঝোপঝাড় বা ছোট-মাঝারি আকারের গাছ হয় এরা। কাঁটা দিয়ে প্রাকৃতিক আচ্ছাদনে নিজেদের তৃণভোজীদের হাত থেকে রক্ষা করে এরা। রোজাসিয়া পরিবারের রুবাস প্রজাতির অন্তর্গত ব্ল্যাকবেরি ও রাশবেরি ঝোপঝাড় নিয়ে বেড়ে ওঠে। ভেষজ অনেক বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ এই পরিবারের সদস্য।
গোলাপ একটি প্রাচীন প্রজাতির উদ্ভিদ হিসেবে মানবসভ্যতায় অনেক আগে থেকেই উপস্থিত। যদিও এখনো তাদের উৎপত্তি কোথায়, তা প্রকৃতভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। বিশ্বাস করা হয় যে গোলাপ প্রথম মধ্য এশিয়ায় পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে উত্তর ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়ায় গোলাপের বিভিন্ন জাতের চাষ শুরু হয়। দার্শনিক কনফুসিয়াসের লেখায় গোলাপের কথা জানা যায়। রোমানরা গোলাপকে ভীষণ পছন্দ করত। তখন কৃষকদের ফসলের পরিবর্তে বাগানে গোলাপ চাষ করতে বাধ্য করা হতো।
সূত্র: ব্রিটানিকা