যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ড রাশের গল্প পড়েছেন অনেকেই। উনিশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তিন লাখের বেশি মানুষের ক্যালিফোর্নিয়ায় সোনার খোঁজে ছুটে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে গোল্ড রাশনির্ভর বিভিন্ন গল্পে। দেড় শ বছরের বেশি সময় পর সোনার জন্য নয়, মানুষ ছুটছেন হাইড্রোজেনের পেছনে। হাইড্রোজেনের জন্য গোল্ড রাশের মতো পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
২০২৩ সালের শুরুর দিকে উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের লরেনে মাটির প্রায় ৩ হাজার মিটার নিচে হাইড্রোজেনের বড় একটি আধারের সন্ধান পাওয়া গেছে। ফ্রান্সের লরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ন্যাশনাল দে লা রেচের্চে সায়েন্টিফিক (সিএনআরএস) গবেষণাগারের পরিচালক বিজ্ঞানী পিরনন বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, নিকট ভবিষ্যতে হাইড্রোজেন অপরিহার্য জ্বালানি হিসেবে আবির্ভূত হবে। জ্বালানি হিসেবে শিল্পে হাইড্রোজেনের ব্যবহার বাড়লেও চাহিদার তুলনায় সরবরাহে বড় ঘাটতি রয়েছে।’
প্রাকৃতিক হাইড্রোজেন গোল্ড হাইড্রোজেন বা সাদা হাইড্রোজেন হিসেবে পরিচিত। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসেরও আগ্রহ রয়েছে সাদা হাইড্রোজেন নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে সাদা হাইড্রোজেন মজুত করার জন্য বিল গেটসের ব্রেকথ্রু এনার্জি ভেঞ্চারস ইনভেস্টমেন্ট প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে ৯ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
মরক্কো, মোজাম্বিক, দক্ষিণ আফ্রিকা ও টোগোতে হাইড্রোজেনের আধার পাওয়া গেছে। অস্ট্রেলিয়া ২০২১ সালে পেট্রোলিয়াম ও জিওথার্মাল আইনের অধীনে হাইড্রোজেন অনুসন্ধানের অনুমতি দিয়েছে। এর আওতায় দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ৫ লাখ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় হাইড্রোজেনের অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে গোল্ড হাইড্রোজেন নামের একটি প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ায় হাইড্রোজেনের বড় একটি আধারের সন্ধান পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। হাইড্রোজেন কাউন্সিলের মতে, ইউরোপ হাইড্রোজেন–নির্ভর জ্বালানির খোঁজে খুবই আগ্রহী। বৈশ্বিক বিনিয়োগের ৩৫ ভাগই আসছে ইউরোপ থেকে।
বিজ্ঞানী পিরনন জানিয়েছেন, ফ্রান্সের লরেনে ২৫কোটি টন হাইড্রোজেন থাকতে পারে। এই আধারের মাধ্যমে দুই বছরের বেশি সময় বর্তমান বৈশ্বিক চাহিদা মেটানো যাবে। বিশ্বজুড়ে অনাবিষ্কৃত আরও অনেক হাইড্রোজেনের আধার থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্যমতে, সারা বিশ্বে বিলিয়ন মেগাটন হাইড্রোজেনের আধার রয়েছে। ইউএসজিএসের গবেষক জিওফ্রে এলিস জানিয়েছেন, হাইড্রোজেনের আধারগুলো ভূপৃষ্ঠের খুব গভীরে বা সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত। আধারগুলোতে প্রায় ১ লাখ মেগাটন ব্যবহারযোগ্য হাইড্রোজেন থাকতে পারে, যার মাধ্যমে কয়েক শ বছর জ্বালানি সরবরাহ করা যাবে।
সূত্র : বিবিসি