সাগরে লোহা ফেলে কার্বন সংগ্রহ করতে চান বিজ্ঞানীরা
সাগরে লোহা ফেলে কার্বন সংগ্রহ করতে চান বিজ্ঞানীরা

কার্বন সংগ্রহ করতে সমুদ্রে ফেলা হবে লোহা

বিজ্ঞানীরা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড সংগ্রহ করতে প্রশান্ত মহাসাগরের পানিতে লোহা ফেলতে চান। ফ্রন্টিয়ার্স ইন ক্লাইমেট জার্নালে এমনই একটি কৌশলের কথা প্রকাশিত হয়েছে। কার্বন সংগ্রহ করতে এই পদ্ধতিতে অনেক কম খরচ হবে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এক্সপ্লোরিং ওশান আয়রন সলিউশনের বিশেষজ্ঞরা কৌশলটি কাজে লাগিয়ে কার্বন ডাই–অক্সাইড ধরতে চান। এ কৌশল সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা নির্ধারণ করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। ২০২৬ সালে উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্রজুড়ে পরীক্ষা শুরু করতে চান বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানী কেন বুসেলার বলেন, এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এই প্রথম সামুদ্রিক বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের লোহার মাধ্যমে গবেষণা করতে একত্র হয়েছেন। এই কর্মসূচির জন্য ১৬ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। ইতিমধ্যেই কম্পিউটার মডেলিংয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন ২০ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে। এখন বিজ্ঞানীরা সমুদ্র লোহা নিষিক্তকরণ পরীক্ষা পরিচালনা করতে মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার কাছে আবেদন করার পরিকল্পনা করছেন।

এই কৌশলের নাম সামুদ্রিক আয়রন ফার্টিলাইজেশন। এই কৌশলের মাধ্যমে ফাইটোপ্লাঙ্কটন নামে পরিচিত সামুদ্রিক উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করার জন্য অল্প পরিমাণে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট আয়রন সমুদ্রের পৃষ্ঠে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে ফাইটোপ্লাঙ্কটন। এসব প্লাঙ্কটন কার্বন ধরে রাখে। প্রচুর পরিমাণে লোহা বাতাস বা আগ্নেয়গিরির ছাই হিসেবে ধূলিকণার মতো উত্স থেকে প্রাকৃতিকভাবে সমুদ্রে প্রবেশ করে। নতুন কৌশলের মাধ্যমে এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা হবে।

বিজ্ঞানী পল মরিস বলেন, কার্বন সঞ্চয় করার জন্য মহাসাগরের বিশাল ক্ষমতা আছে। বায়ুমণ্ডলের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি ও ভূমিভিত্তিক গাছপালা, মাটির চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি কার্বন সঞ্চয় করার ক্ষমতা আছে মহাসাগরের। এটা প্রাকৃতিক ক্ষমতা, একে বাড়ানোর সুযোগ আছে।

১৯৯০ ও ২০০০ দশকে সমুদ্রে লোহা যুক্ত করা হয়েছে। ২০১৩ সালের লন্ডন প্রটোকল অনুসারে বৈশ্বিক মহাসাগর দূষণ চুক্তির অধীন এ কাজ নিষিদ্ধ করা হয়। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তখন। সেই সময় সমুদ্রের প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে নষ্ট করেন মার্কিন উদ্যোক্তা রাস জর্জ। তিনি কানাডার উপকূলে সমুদ্রে ১০০ টন লোহার ধূলিকণা ফেলেছিলেন। স্যামন মাছ ধরার জন্য লোহা ফেলা হয়েছিল। সমুদ্রে অতিরিক্ত লোহা ফেললে সামুদ্রিক প্রাণীর ক্ষতির ঝুঁকি বাড়বে বলে অন্য একদল বিজ্ঞানী মনে করেন।

২০২৩ সালে ফরাসি, ব্রিটিশ ও মার্কিন গবেষকেরা এ বিষয়ে একটি যৌথ গবেষণা পরিচালনা করেন। প্রতিবছর সমুদ্রে ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টন লোহা যোগ করলে ২১০০ সালের মধ্যে সাড়ে ৪০০ কোটি টন কার্বন ডাই–অক্সাইড সংগ্রহ করা যাবে। কম্পিউটার মডেলিং থেকে জানা যায়, এমন মাত্রায় লোহা ফেললে সামুদ্রিক জীব পুষ্টিবঞ্চিত হবে। তাই এই পরিকল্পনা নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছে।

সূত্র: ইউরো নিউজ