বিবর্তনবাদ ও প্রকৃতির নানা রহস্য উন্মোচনের জন্য বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন আলোচিত এক নাম। এইচএমএস বিগল নামের একটি জাহাজে চড়ে ১৮৩১ থেকে ১৮৩৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে বেরিয়েছেন ডারউইন। সেই অভিযানের সময় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রাণী ও উদ্ভিদ পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সময়ে দুনিয়া কাঁপানো সব তত্ত্ব প্রকাশ করেন তিনি।
ডারউইনকে সম্মান জানিয়ে এইচএমএস বিগলের মতো দেখতে এক জাহাজে করে সমুদ্র ভ্রমণ করছেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। ডারউইনের বিখ্যাত যাত্রাপথ অনুসরণ করে ছুটে চলা জাহাজটির নাম ওস্টারস্কেলডি। গত বছরের আগস্টে যুক্তরাজ্যের ডেভনের প্লাইমাউথ থেকে দুই বছরের জন্য সমুদ্রে যাত্রা শুরু করেছে ১০৭ বছর বয়সী পুরোনো জাহাজটি। জাহাজে থাকা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ জন তরুণ প্রকৃতি সংরক্ষণবাদীকে অনলাইনে প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। আর তাই বিশ্বের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ক্লাসরুম বলা হচ্ছে এই অভিযানকে।
ডারউইন ২০০ নামের একটি কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাহাজে চড়ে সমুদ্রে ভ্রমণের পাশাপাশি অন্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এই কর্মসূচির প্রতিষ্ঠাতা স্টুয়ার্ট ম্যাকফারসন বলেন, ‘আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা তরুণ প্রকৃতি সংরক্ষণবাদীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাঁরা যেন আগামী দিনের বিশ্বকে পরিবর্তনের জন্য কাজ করেন, সে জন্যই এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণে গালাপাগোসের সামুদ্রিক ইগুয়ানাস থেকে শুরু করে দক্ষিণ আমেরিকার তোতাপাখির মতো বিভিন্ন বিষয় তরুণদের শেখানো হচ্ছে।’
গত মে মাসে জাহাজটি ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছেছে। গ্যালাপাগোস দ্বীপ বিবর্তন সম্পর্কে ডারউইনের চিন্তাধারায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কারণ, গ্যালাপাগোস দ্বীপে থাকা প্রাণীদের প্রজাতির মধ্যে পার্থক্য পর্যবেক্ষণ করে বিবর্তন বিষয়ে ‘অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস’ নামের আলোচিত বই প্রকাশ করেন ডারউইন।
বিজ্ঞানীদের একটি দল এরই মধ্যে হারিয়ে যাওয়া প্রজাতির গেকো পুনরাবিষ্কার করেছে। আরেকটি দল ব্রাজিলের উপকূলে অক্টোপাসের একটি প্রজাতির সম্পূর্ণ নতুন আচরণের তথ্য প্রকাশ করেছে। এরই মধ্যে ১০টি নতুন প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী আবিষ্কার করেছেন তাঁরা। জাহাজটি বর্তমানে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোর চারপাশে ভ্রমণ করলেও এ বছরের শেষ নাগাদ নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া পৌঁছাবে।
সূত্র: বিবিসি