বিজয়ের লোগো, মাসকট ও কিবোর্ড লে–আউট
বিজয়ের লোগো, মাসকট ও কিবোর্ড লে–আউট

প্রযুক্তির এই দিনে: ১৬ ডিসেম্বর

বিজয় বাংলা সফটওয়্যার প্রকাশিত

১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর কম্পিউটারে বাংলা লেখালেখির জন্য প্রথমবারের মতো বিজয় সফটওয়্যার ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে বিজয়।

১৬ ডিসেম্বর ১৯৮৮
বিজয় বাংলা সফটওয়্যার প্রকাশিত
১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর কম্পিউটারে বাংলা লেখালেখির জন্য প্রথমবারের মতো বিজয় ব্যবহার করা হয়। কারিগরি দিক থেকে বিজয় ছিল একটি ইন্টারফেস। লেখালেখির অন্য সফটওয়্যারকে ব্যবহার করে বাংলা লেখার কাজটি করে দেয় এ প্রোগ্রাম। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে বিজয়। এখন পেশাদার টাইপের কাজের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিজয় লে-আউট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের নির্মাতা আনন্দ কম্পিউটার্স।

আনন্দ কম্পিউটার্সের প্রধান মোস্তাফা জব্বার ১৯৮৬ সালে লন্ডনে সেই সময়ের আধুনিক মুদ্রণ প্রযুক্তি ফটোটাইপ সেটার যন্ত্র কিনতে যান। লন্ডনে বসে ম্যাকওয়ার্ল্ড পত্রিকায় তিনি দেখলেন, অ্যাপল কম্পিউটার ইনকরপোরেটেড ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার বাজারে এনেছে। একটি কম্পিউটার, একটি লেজার প্রিন্টার দিয়ে টেবিলে বসে প্রকাশনার কাজ সারা যায়। যেটির নাম ডেস্কটপ পাবলিশিং (ডিটিপি)। খোঁজ নিয়ে দেখলেন এ যন্ত্রে বাংলাও লেখা যায়। বাংলাদেশে প্রচলিত টাইপের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন বঙ্কিম নামে একটা ফন্টও আছে। মোস্তাফা জব্বার ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার কিনে নিয়ে এলেন। ঢাকায় সৈয়দ মইনুল হাসান বঙ্কিমকে একটু পরিবর্তন করে বানালেন মইনুল লিপি। আর অপটিমা মুনীর লে-আউটের ওপর আরও দুটি স্তর যোগ করে জব্বার কি-বোর্ড তৈরি হলো।

মোস্তাফা জব্বার

১৯৮৭ সালের ১৬ মে ম্যাক কম্পিউটার দিয়ে বের হলো সাপ্তাহিক আনন্দপত্র। তবে অপটিমা মুনীরের ওপর আরও দুই স্তরের বোতাম থাকায় টাইপ করার গতি বেশ শ্লথ হতে থাকে। এ সমস্যার সমাধান একটাই, প্রোগ্রাম বানাতে হবে। মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে দিল্লিতে গিয়ে দেবেন্দ্র যোশীকে দিয়ে ৩ কিলোবাইটের প্রোগ্রাম—বিকেবিডি (বিজয় কি–বোর্ড) তৈরি করাই। কারণ, তখন দেশে অ্যাপল ম্যাকের প্রোগ্রামার কেউ ছিল না। সে বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় নামে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ছাড়া হয়। সে সময় ম্যাক এসই, ম্যাক +৫১২ কেই আর ম্যাক-টু কম্পিউটারে বিজয় দিয়ে কাজ করা যেত।’
১৯৮৯ সালের মধ্যে ফটোটাইপ সেটারের জায়গা দখল করল ম্যাকনির্ভর ডিটিপি। কিন্তু দেখা গেল কিছু যুক্তাক্ষর লিখতে সমস্যা হচ্ছে। প্রোগ্রামটি করা হয়েছিল ভারতীয় বাংলা ধরে। তাই মোস্তাফা জব্বার সিদ্ধান্ত নিলেন দেশে প্রোগ্রাম তৈরি করার। গোলাম ফারুক আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হলো প্রোগ্রাম লেখার। ১৯৯২ সালে নিজেদের প্রোগ্রামিং করা বিজয় পাওয়া গেল।

বিজয়ের লোগো

১৯৮৯ সালে বিজয়ের কপিরাইট করে নেয় আনন্দ কম্পিউটার্স। বিজয়ের উইন্ডোজ সংস্করণ প্রকাশ করা হয় ১৯৯৩ সালে। ক্রমাগত উন্নয়নকাজ চলেছে বিজয়ের। ইউনিকোড সংস্করণসহ বিভিন্ন যন্ত্রে ব্যবহারের উপযোগী বিজয় সফটওয়্যার এখন রয়েছে। ২০০৪ সালে বিজয় কি-বোর্ড লে-আউটের পেটেন্টের জন্য আবেদন করেন মোস্তাফা জব্বার। পেটেন্টের স্বত্ব পান ২০০৮ সালে। মোস্তাফা জব্বারের নেতৃত্ব বিজয় উন্নয়নে কাজ করেছেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে আছেন প্রোগ্রামিংয়ে দেবেন্দ্র যোশী, গোলাম ফারুক আহমেদ, কামরুজ্জামান, নিয়াজ মোহাম্মদ, মনিরুল আবেদিন, রিফাত উন নবী, অর্পিতা ঊর্মি, শোভন, তাহমিনা তাহা, মইনুদ্দিন সালেহ এবং টাইপোগ্রাফিতে হামিদুল ইসলাম, শিব নারায়ণ দাশ, উজ্জ্বল কুমার মজুমদার, মাকসুদ আহমেদ ও মজিবুর রহমান। বর্তমানে সব ধরনের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনসহ সব যন্ত্রের প্রায় সব রকমের অপারেটিং সিস্টেমে বিজয় বাংলা সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়। মোস্তাফা জব্বার প্রথম আলোকে জানান, ২০১৮ সালে বিএসটিআই বিজয় কি–বোর্ডকে জাতীয় মান কি–বোর্ড হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে।

বাংলাদেশ বেতারের বর্তমান প্রতীক

১৬ ডিসেম্বর ১৯৩৯
ঢাকায় প্রথম বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র চালু
ব্রিটিশ ভারতের এ অঞ্চলে (বর্তমান বাংলাদেশ) প্রথম বেতার সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আর তা ঢাকায়। নাজিমুদ্দিন রোডে একটি ভাড়াবাড়িতে (বর্তমানে শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্টগ্র্যাজুয়েট কলেজ) দুটি স্টুডিও নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। এই বেতার কেন্দ্রের  প্রথম নামকরণ করা হয় ‘ঢাকা ধ্বনি বিস্তার কেন্দ্র’। ঢাকা বেতারের সম্প্রচার যন্ত্র, অর্থাৎ ট্রান্সমিটার বসানো হয়েছিল বর্তমান কল্যাণপুরে। ১৯৬০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেতার ভবন স্থানান্তরিত হয় ঢাকার শাহবাগে। ১৯৮৩ সালের ৩০ জুলাই শেরেবাংলা নগরে বর্তমানের জাতীয় বেতার ভবনে ঢাকা প্রচার কেন্দ্র স্থানান্তরিত হয়। বাংলাদেশ বেতারের ১৪টি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও ৬টি ইউনিট থেকে ১৬টি মধ্যম তরঙ্গ ট্রান্সমিটার, ২টি ক্ষুদ্র তরঙ্গ ট্রান্সমিটার ও ৩৪টি এফএম ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে দৈনিক ৪৯৭ ঘণ্টা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হচ্ছে।
সূত্র: বাংলাদেশ বেতারের ওয়েবসাইট