আলোচিত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স একটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে গোপন চুক্তি করেছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির গোপন চুক্তির অধীনে শত শত গুপ্তচর স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের একটি নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ চলছে।
ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান ও মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে বেশ গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেছে। স্পেসএক্সের স্টারশিল্ড কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিকনেসেন্স অফিসের সঙ্গে (এনআরও) চুক্তি হয়। এনআরও একটি গোয়েন্দা সংস্থা, যা স্পাই স্যাটেলাইট পরিচালনা করে। ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের চুক্তির অধীনে নেটওয়ার্কটি তৈরি করছে স্পেসএক্স।
মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক প্রকল্পে স্পেসএক্সের সম্পৃক্ততা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পেন্টাগন পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথ প্রদক্ষিণকারী স্যাটেলাইট সিস্টেম তৈরিতে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করছে। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মার্কিন সরকার ও সেনাবাহিনীর বিশ্বের যেকোনো জায়গায় সম্ভাব্য লক্ষ্য দ্রুত চিহ্নিত করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে। চুক্তি নিয়ে এরই মধ্যে সমালোচনা তৈরি হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে অজানা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে স্টারশিল্ডের চুক্তির কথা প্রথম প্রকাশ করে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স প্রথম স্পেসএক্সের চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে। সামরিক এই চুক্তি একটি শক্তিশালী নতুন গুপ্তচর ব্যবস্থার জন্য ব্যবহার করা হবে। শত শত স্যাটেলাইট পৃথিবীর ছবি তোলার (আর্থ-ইমেজিং) সক্ষমতার মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ওপর নজর রাখতে পারবে। নিম্ন কক্ষপথে ঝাঁকের কইয়ের মতো স্যাটেলাইট বিচরণ করবে।
স্পেসএক্সের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে রয়টার্সের কাছে তারা কোনো মন্তব্য করেনি। একটি বিবৃতিতে গোয়েন্দা সংস্থা এনআরও অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ব্যবস্থা বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করার কথা স্বীকার করেছে। যদিও স্পেসএক্সের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না, তা স্পষ্ট করেনি।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন মুখপাত্র বলেন, ন্যাশনাল রিকনেসান্স কার্যালয় বিশ্বের সবচেয়ে সক্ষম, বৈচিত্র্যময় ও স্থিতিস্থাপক মহাকাশভিত্তিক বুদ্ধিমত্তা, নজরদারিব্যবস্থা গড়ে তুলছে। বিভিন্ন স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠের লক্ষ্যবস্তুকে দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে শনাক্ত করতে পারবে। স্যাটেলাইট থেকে মার্কিন সরকার গোয়েন্দা তথ্য ও সামরিক অভিযানের জন্য সহায়তা নিতে পারবে। বিশ্বের প্রায় যেকোনো জায়গার ছবি দ্রুত ধারণ করতে সক্ষম হবে বিভিন্ন স্যাটেলাইট।
জানা গেছে, স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে ২০২০ সাল থেকে প্রায় এক ডজন নমুনা স্যাটেলাইট নিম্ন কক্ষপথে পাঠানো হয়েছে। একটি মার্কিন সরকারি ডেটাবেজ থেকে বেশ কিছু স্পেসএক্স মিশন স্যাটেলাইট স্থাপনের তথ্য মিলেছে। বিভিন্ন সূত্র স্যাটেলাইটগুলো স্টারশিল্ড নেটওয়ার্কের নমুনা বলে জানিয়েছে। এসব বেনামী স্যাটেলাইট নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উঠেছে। পেন্টাগন ইতিমধ্যে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেট ব্যবহার করে মহাকাশে সামরিক পণ্য প্রেরণ করছে। অন্যদিকে, সামরিক স্যাটেলাইটারে বাইরে স্পেসএক্সের বাণিজ্যিক সেবার জন্য সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো স্যাটেলাইট রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, স্টারশিল্ডের মূল লক্ষ্য অত্যাধুনিক মহাকাশ সামরিক ব্যবস্থার বিকাশ। এই নেটওয়ার্ক মার্কিন সরকারের রিমোট সেন্সিং ক্ষমতাকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করার জন্য ব্যবহার করা হবে। ইমেজিং সেন্সরসহ আন্ত–স্যাটেলাইট লেজার ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন গোপন সূত্র থেকে জানা গেছে।
সূত্র: আল–জাজিরা, রয়টার্স