শত শত বছর ধরে বাতাসের শক্তিতে পালচালিত বিশাল বিশাল নৌকায় পণ্য বহন করা হতো। বিশাল পাল উঁচু মাস্তুলের ওপর প্রসারিত করে শত শত বছর আগে পৃথিবীর বিভিন্ন মহাসাগরে বণিকেরা জাহাজে পণ্য পরিবহন যুগের সূচনা করেন। শিল্পবিপ্লবের ধাক্কায় স্টিম ইঞ্জিন বদলে দেয় সমুদ্রে পণ্য পরিবহনের চিত্র। এখন প্রায় সব মালবাহী জাহাজ ডিজেলচালিত। এতে ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণের মাত্রা বাড়ছে। সেই সমস্যা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিয়ামির কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিজ্ঞানীরা বাতাসের মাধ্যমে আজকের বিশাল ও আধুনিক মালবাহী জাহাজ (কার্গো শিপ) চালাতে নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন।
বিজ্ঞানী গেচেং ঝা বলেন, জাহাজশিল্প বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৩ শতাংশের জন্য দায়ী। এই সময়ের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে বায়ুশক্তি–নির্ভর মালবাহী জাহাজ ডিজেল ইঞ্জিনের একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে। পরিবেশবান্ধব উপায়ে জাহাজশিল্পকে ডিকার্বোনাইজড করার কার্যকর উপায় হতে পারে। সাধারণভাবে জাহাজশিল্পে পরিবর্তন গ্রহণ না করার প্রবণতা রয়েছে। ডিজেল ইঞ্জিন খুব শক্তিশালী বলে পরিবর্তন গ্রহণ করা হয় না। এটি পরিবর্তন করতে হবে।
বিজ্ঞানীরা বিশালাকায় সিলিন্ডার তৈরি করছেন। এই সিলিন্ডার মালবাহী জাহাজের ডেকে বসানো হবে, যা বাতাসের মাধ্যমে জাহাজের জন্য থ্রাস্ট তৈরি করবে। বেশ কয়েক তলা উঁচু এসব সিলিন্ডার জাহাজ চলাচলে সহায়তা করতে পারে। জাহাজ চলাচলের কিছু রুটে এসব সিলিন্ডার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি খরচ কমিয়ে দিতে পারে।
উচ্চ প্রযুক্তির সিলিন্ডার পণ্যবাহী জাহাজ চালাতে ভালো কাজ করতে পারে। বায়ুনির্ভর এই প্রযুক্তি জাহাজের জন্য পরিবেশগতভাবে ভালো। স্পিনিং রোটর বায়ুশক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তর করে মালবাহী জাহাজকে শক্তি দিতে পারে। এই প্রযুক্তি ইতিমধ্যে কিছু জাহাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রায় ৩০টি মালবাহী জাহাজ বর্তমানে বায়ুশক্তির মাধ্যমে চালানো হচ্ছে। অ্যালুমিনিয়াম, ফাইবারগ্লাস ও কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি পাল দিয়ে বায়ুশক্তি উৎপন্ন করে জাহাজের ইঞ্জিনকে সহায়তা করা হচ্ছে। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল উইন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশনের মতে, এই দশকের শেষ নাগাদ বায়ুচালিত জাহাজ সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এমন ননরোটেটিং সিলিন্ডার নতুন ধরনের বিমান তৈরির সুযোগও দেবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: টেকএক্সপ্লোর