অনলাইন দরজিবাড়ি টাইলোর উদ্যোক্তা রাসেল শেখ
অনলাইন দরজিবাড়ি টাইলোর উদ্যোক্তা রাসেল শেখ

রাসেলের অনলাইন দরজিবাড়ি, মাসে আয় ১০ লাখ টাকার বেশি

বাংলাদেশের ফ্যাশন শিল্পে ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছা থেকেই রাসেল শেখের উদ্যোগ। উদ্যোগটি হলো, রাসেলের ফেসবুক পেজ টাইলো। এই পেজে ক্রেতা তাঁর পোশাকের মাপ জানিয়ে দিলেই পেয়ে যাবেন তৈরি পোশাক। বর্তমানে রাসেলের টাইলোতে কর্মীর সংখ্যা ২৩। রাসেলের এই পেজে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা বিকিকিনি হয়। অনলাইনভিত্তিক দরজিবাড়ি টাইলোর প্রতিষ্ঠাতা রাসেল শেখ এখনো কিন্তু শিক্ষার্থী। পড়াশোনা করছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগে।

রাসেল শেখ শার্ট ও পাঞ্জাবি বানান। বর্তমানে তাঁর গ্রাহকসংখ্যা ১০ হাজার। গ্রাহকেরা নিজেদের মাপমতো পোশাক বানিয়ে থাকেন টাইলোর থেকে। এখানে নিজের পছন্দের কাপড় বা নিজের পছন্দমতো ডিজাইন দেখিয়ে দিলে সেটি বানিয়ে দেওয়া হয়।

খণ্ডকালীন একটি চাকরি করতেন রাসেল শেখ। সেই চাকরি ছেড়ে দেন ২০১৯ সালে। জমানো কিছু টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেন। সেই ব্যবসা শার্ট তৈরি ও বিক্রির। কিছুদিন যেতেই ব্যবসায় লোকসান হয় রাসেলের। লোকসানে পড়ে আবার ফিরে গেলেন চাকরিতে। কিছুদিন বেশ মনোযোগ দিয়ে করলেন চাকরিটা। তবে কিছুদিন পর সেই চাকরি আর ভালো লাগে না রাসেলের। ২০১৯ সালের শেষ দিকে এসে ফ্যাশন উদ্যোগের একটি পরিকল্পনা দাঁড় করালেন।

অনলাইনে গ্রাহকের দেওয়া ফরমাশ অনুযায়ী টাইলো পোশাক বানিয়ে দেয়

ব্যবসা শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই হানা দিল করোনা মহামারি। তবে এবার ভেঙে পড়েন না রাসেল। পুরোদমে চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন। তখন ড্যাফোডিলের ইনোভেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগে ভর্তি হয়ে গেছেন তিনি। নিজের বিভাগ তাঁকে নানাভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে থাকল। আগে রাসেলের জানা ছিল না কীভাবে বাজার গবেষণা করতে হয়, মার্কেট ডেমো কেন লাগে, কীভাবে তহবিল পেতে হয়, দক্ষ একটি দল কেন লাগে, অর্থ খরচের ক্ষেত্রে কী পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়, পণ্য সরবরাহের প্রক্রিয়া (সাপ্লাই চেইন) কেন শক্তিশালী করতে হবে? নিজের বিভাগ থেকে হাতে-কলমে এসব শিখতে পারেন রাসেল। দুই বছর আগে নিজের বিভাগ থেকেই পেয়েছিলেন ৪০ হাজার টাকার তহবিল। কিছুদিন আগে রাসেল বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে ৪০ লাখ টাকার তহবিল পেয়েছেন।

রাসেল শেখের উদ্যোগ বড় হচ্ছে

রাসেল শেখ প্রথম আলোকে বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এমন একটি পরিবেশ পেলাম, যেখানে সবাই উদ্যোক্তা হতে চান। নিজের আগ্রহের কারণেই আমি প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ঠিকমতোই করছি। ব্যবসার জন্য আমাকে কাঁচামাল সংগ্রহ, কারখানা ব্যবস্থাপনা, তহবিল ব্যবস্থাপনা ও পণ্য সরবরাহ—সবকিছুই দেখতে হয়। ফলে সারা দিনই ব্যস্ত থাকতে হয়।’ রাসেল শেখ মনে করেন, উদ্যোক্তা হতে জ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই। তাই তিনি ঠিকমতো ক্লাস করার চেষ্টা করেন। এর বাইরে বিভাগের নানা কার্যক্রমের সঙ্গেও যুক্ত থাকেন।

দিন দিন বড় হচ্ছে রাসেলের ব্যবসা। এখন তিনি অন্যদের চাকরি দিচ্ছেন। তবু তিনি মনে করেন, এখনো অনেক পথ বাকি। নিজের ব্র্যান্ড টাইলোকে তিনি এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চান, যাতে পাঁচ বছর পর তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।