২০১৫ সালের হিমেল সকাল। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা। এর নাম এসিএম-আইসিপিসি (আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা) এশিয়া ঢাকা আঞ্চলিক পর্ব। এই পর্বের শীর্ষ দুটি দল যাবে এসিএম-আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালসে, অর্থাৎ চূড়ান্ত পর্বে। সেটি পরবর্তী বছর ২০১৬ সালে থাইল্যান্ডের ফুকেটে হবে। এটি ছিল এশিয়া মহাদেশে তৃতীয়বারের মতো আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্বের আয়োজন।
ফুকেটের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি) দলের কোচকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী মুঠোফোনে কল করলেন। জানালেন তিনি আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা ইউএপিতে আয়োজন করতে চান।
ফোন পাওয়ার পর সেই কোচ তাঁর সাবেক শিক্ষক তৎকালীন আইসিপিসি এশিয়া পশ্চিম অঞ্চলের পরিচালক ড. আবুল এল হকের সঙ্গে সহকর্মীদের পরিচয় করালেন। একদিন একটি রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খেতে খেতে আলোচনা গড়াতে থাকল। তবে তা আটকে গেল একটি শর্তে। ইউএপিকে আগে জাতীয় প্রতিযোগিতা—এনসিপিসি আয়োজন করতে হবে।
২০১৬ সালের ওই সময়ে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এনসিপিসি আয়োজনের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়েছিল। ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে মুঠোফোনে এক বছর পিছিয়ে ২০১৭–এর এনসিপিসি আয়োজনের জন্য অনুরোধ করলেন। উপাচার্য অনুরোধ শুনলেন। ফলে ইউএপি এনসিপিসি ২০১৬ এবং একই বছর আইসিপিসি এশিয়া ঢাকা আঞ্চলিক পর্বের আয়োজন করে। এ আয়োজন দেখে আইসিপিসি এশিয়ার পরিচালক অধ্যাপক সি জে হোয়াং ইউএপিকে পরবর্তী এশিয়া ঢাকা আঞ্চলিক এবং বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড ফাইনালস আয়োজনের প্রস্তাব দেন।
প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীর সুদৃঢ় নেতৃত্বে, ইউএপির কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও সহযোগীদের চেষ্টায় ৪৫তম আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্ব চলে এল ঢাকায়।
বাংলাদেশে প্রোগ্রামিংয়ের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব আয়োজনে জামিলুর রেজা চৌধুরীর ভূমিকা অগ্রণী। পাশাপাশি ড. আবুল এল হক, ড. হোয়াং, ড. এম কায়কোবাদসহ কম্পিউটারবিজ্ঞানের শিক্ষাবিদদের চেষ্টা অনস্বীকার্য। এ ছাড়া সহযোগিতা করেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদসহ সরকারের আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কর্মকর্তারা।
অপেক্ষা এখন আর কটা দিনের। আগামী ৬ নভেম্বর পর্দা উঠবে প্রোগ্রামিংয়ের বিশ্বকাপ, ৪৫তম আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস–ঢাকা।
লেখক: গবেষক ও ইউএপির সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক