মাশরুমের মাইসেলিয়াম বা রুটের মতো তন্তু দিয়ে তৈরি রোবট
মাশরুমের মাইসেলিয়াম বা রুটের মতো তন্তু দিয়ে তৈরি রোবট

রোবটকে নিয়ন্ত্রণ করবে মাশরুম

রোবট মানেই আমাদের সামনে যন্ত্রমানবের ছবি ভেসে ওঠে। রোবট ব্যাটারি কিংবা বৈদ্যুতিক তারের সংযোগে চলতে পারে। বিজ্ঞানীরা ভিন্নমাত্রার বিশেষ ধরনের রোবট তৈরি করছেন, যেটিকে মাশরুম বা ছত্রাক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। রোবটের যন্ত্রাংশগুলো মাশরুমের মাইসেলিয়াম বা রুটের মতো তন্তুর বিকাশ করে তৈরি করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দুটি রোবট তৈরি করেছেন। এসব রোবট ছত্রাক থেকে তৈরি বৈদ্যুতিক সংকেত ও আলোর সংবেদনশীলতা ব্যবহার করে পরিবেশ বুঝতে পারে। ছত্রাকের মাধ্যমে পাওয়া বৈদ্যুতিক সংকেতের বিপরীতে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে এই রোবট।

এ ধরনের রোবট তৈরির বিষয়কে ‘বায়োহাইব্রিড রোবোটিকস’ বলা হয়। আংশিকভাবে জীবিত ও আংশিকভাবে প্রকৌশল সত্তা এক করে রোবট তৈরির উপায় সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচিত। উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষ, পোকামাকড়কে সিন্থেটিক উপাদানের সঙ্গে যুক্ত করে জৈবিকভাবে যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করার কৌশলে বায়োহাইব্রিড রোবটিকস কাজ করে।

ছত্রাকের মাধ্যমে রোবট নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে ‘সায়েন্স রোবটিকস’ সাময়িকীতে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। বায়োহাইব্রিড রোবট নিয়ে বিভিন্ন গবেষণাগারে কাজ চলছে। বিজ্ঞানী রবার্ট শেফার্ড বলেন, ‘ল্যাবে তৈরি রোবট হালকা-সংবেদনশীল ছত্রাক মাইসেলিয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। কম্পিউটিং, রোবোটিকস আর জীববিজ্ঞানের নানা বিষয়কে কৃত্রিম ব্যবস্থায় যুক্ত করার কাজ চলছে। বায়োহাইব্রিডাইজেশনের মাধ্যমে জীবজগতের বিভিন্ন উপাদান কৃত্রিম প্রকৌশলে ব্যবহারের চেষ্টা করছি আমরা। রোবট তৈরিতে কিং অয়েস্টার মাশরুম ব্যবহার করা হচ্ছে। গবেষকেরা এই প্রজাতির মাশরুম বেছে নিয়েছেন। কারণ, এ ধরনের মাশরুম দ্রুত বৃদ্ধি পায়। মাশরুমের সুতোর মতো কাঠামো বা মাইসেলিয়াম নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে। এ কাঠামো মানবমস্তিষ্কের নিউরনের মতো কিছুটা কাজ করে। রোবটটি আসলে ছত্রাকের মাইসেলিয়াম দিয়ে পরিচালিত হয়।

ল্যাবে একটি পেট্রি ডিশে চাষ করা ছত্রাক রোবটের কাঠামো বা স্ক্যাফোল্ডিংয়ের ওপরে ১৪ থেকে ৩৩ দিনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মাইসেলিয়াম ছোট বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে এবং ইলেকট্রোডের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে। যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ডের বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু অ্যাডামাৎস্কি বলেন, ‘আমরা ছত্রাকের মাধ্যমে কিন্তু কম্পিউটার তৈরি করেছি। আসলে ছত্রাক কীভাবে বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরি করে, তা স্পষ্ট নয়। কেউ নিশ্চিতভাবে জানেন না। তবে সব জীবন্ত কোষে এমন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।’

যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির বায়োহাইব্রিড ও জৈব রোবোটিকস গ্রুপের বিজ্ঞানী ভিক্টোরিয়া ওয়েবস্টার-উড বলেন, বায়োহাইব্রিড রোবোটিকসের কাজ দেখতে বেশ রোমাঞ্চকর। রোবটের সঙ্গে প্রাণিকোষ ও পোকামাকড়ের টিস্যু জড়িয়ে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের রোবট কৃষি ও সামুদ্রিক পর্যবেক্ষণে ব্যবহার করা যেতে পারে।

সূত্র: সিএনএন