সাকিল আহমেদ
সাকিল আহমেদ

প্রথম কাজে ব্যর্থ হয়ে এখন সফল ফ্রিল্যান্সার সাকিল, মাসে আয় ১২ লাখ টাকা

বাংলাদেশের আর দশটা ছেলেমেয়ের মতোই ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন যশোর শহরের বাসিন্দা সাকিল আহমেদ। এ সময় ঘরে বসেই গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ই-কমার্স, ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংসহ ভিডিও সম্পাদনার কাজ শেখেন তিনি। উদ্দেশ্য ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে অনলাইনে আয় করবেন। বেশ কিছুদিন চেষ্টার পর অনলাইন মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্কে ১০ ডলারের একটি লোগো নকশার কাজও পান তিনি। কিন্তু সময়মতো ভালোমানের কাজ জমা দিতে না পারায় প্রথম কাজ থেকে এক টাকাও পাননি সাকিল। প্রথম কাজে ব্যর্থ হয়ে সাকিল বুঝতে পারেন ফ্রিল্যান্সিং কাজ করা সহজ নয়। এ জন্য নিজেকে আরও যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রায় দুই বছর পর আবারও অনলাইনে ৩০ ডলারের কাজের ফরমাশ পান সাকিল। নিজেকে যোগ করে গড়ে তোলায় এবার আর ব্যর্থ হননি তিনি। সময়মতো কাজটি শেষ করায় ক্লায়েন্ট খুশি হয়ে নতুন কাজ দেন।

১০ ডলারের কাজ করতে না পারা সাকিল এখন বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে প্রতি মাসে আয় করেন প্রায় ১২ লাখ টাকা। পাশাপাশি যশোর শহরে অবস্থিত নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘টিম-ওয়াইজ’-এ পাঁচজন কর্মীর কাজের সুযোগও করে দিয়েছেন। ফ্রিল্যান্সিং কাজে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনে সম্মাননাও পেয়েছেন তিনি।

প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার

ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের বিষয়ে বেশ আগ্রহ ছিল সাকিল আহমেদের। আর তাই এসএসসি পরীক্ষা শেষে নিজেই অনলাইন থেকে গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ই-কমার্স, ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংসহ ভিডিও সম্পাদনার কাজ শেখেন। এ বিষয়ে সাকিল আহমেদ বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রোগ্রাম আমি নিজেই অনলাইন থেকে শিখেছি। এখনো নিয়মিত শিখছি। আমার কাছে অনলাইনে থাকা তথ্যগুলো যথেষ্ট মনে হয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং কাজে সফল হওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা বিভিন্ন গ্রুপ অনেক সহায়তা করেছে।’

শুধুই এগিয়ে চলা

ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরুর প্রথম দুই বছরে সাকিলের আয় ছিল মাত্র ৩০ ডলার বা ৩ হাজার টাকা। কিন্তু রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে এইচএসসি পড়া অবস্থায় তাঁর আয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এর ফলে পড়ালেখার জন্য পরিবারের কাছ থেকে হাত খরচ এবং কলেজের বেতন নিতে হতো না সাকিলকে।  

২০১৯ সালের শেষে সাকিল অনলাইনে গ্রাফিকসের কাজ শুরু করেন। এ বিষয়ে সাকিল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি খুব রুচিশীল মানুষ ছিলাম, আর তাই যখন যে কাজ যতটুকু করতাম, নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা করতাম। আর এ বিষয়টি আমার ডিজাইন ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলেছে। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর চোখ এড়ায়নি আমার নকশাগুলো। আর তাই অ্যামাজনের প্রথম সারির ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কাজ করার অভিজ্ঞতাও আমার রয়েছে।’

জাতীয় ফ্রিল্যান্সার সম্মেলনে সম্মাননা গ্রহণ করছেন সাকিল আহমেদ

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

দুবাইয়ে অ্যামাজনের গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন সাকিল। কিন্তু নিজের দেশ বা শহর ছেড়ে কোথাও কাজের পরিকল্পনা নেই তাঁর। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সাকিল আহমেদ বলেন, ‘আমি নিজেকে আরও উন্নত করতে পারলে আমার সঙ্গে দেশের এবং অন্যদের উন্নতি হবে। আমি যদি ৩০ জন মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারি, সেটি শুধু ৩০ জন মানুষের নয়, ৩০টি পরিবারের জন্য করা হবে।’