দেশে ই–কমার্সভিত্তিক উদ্যোগের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ডিজিটাল কমার্স মেলায় পণ্য প্রদর্শন করছেন ডিজিটাল পল্লির উদ্যোক্তারা।
দেশে ই–কমার্সভিত্তিক উদ্যোগের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ডিজিটাল কমার্স মেলায় পণ্য প্রদর্শন করছেন ডিজিটাল পল্লির উদ্যোক্তারা।

বাজেটে আইসিটি খাতের প্রত্যাশা-৪

ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ই-কমার্স যুক্ত করা হোক

ট্রেড লাইসেন্সে ব্যবসার ধরন বা ক্যাটাগরি হিসেবে ই–কমার্সকে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই–ক্যাব)। পাশাপাশি আগামী বাজেটে  ডিজিটাল ব্যবসা হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের (আইটিইএস) সুবিধাগুলো ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য দেওয়ার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে দেশের আইসিটি খাতের প্রত্যাশা নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের তৃতীয় পর্বে আজ থাকছে বাজেটে ই–ক্যাবের প্রত্যাশার কথা। লিখেছেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শমী কায়সার

শমী কায়সার, সভাপতি, ই–ক্যাব

প্রথম যে বিষয়টি একেবারেই মৌলিক সেটা হচ্ছে ই-কমার্সের সংজ্ঞা। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি বিধিতে ই-কমার্সের সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে সরলীকরণ করা হয়েছে। এখানে একটি সাধারণ ই-কমার্স দোকান ও মার্কেটপ্লেস দুইয়ের ব্যবসা পদ্ধতি এবং রাজস্ব মডেল কিন্তু এক নয়। আমরা এই দুটোকে আলাদা করার প্রস্তাব করেছি। এতে করে নীতিমালা প্রণয়নের সুবিধা হবে। কারণ, এখানে বেশির ভাগ উদ্যোক্তা কিন্তু ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র।

তাই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের কথা বিবেচনা করা প্রয়োজন।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার (আইটিইএস) ক্ষেত্রে কিছু সুযোগসুবিধা রয়েছে। ই-কমার্সকে বাড়তি সুবিধা দিতে আইটি ও আইটিইএস আলাদা করে স্বতন্ত্র ব্যবসা খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

কিন্তু এই খাতে বাড়তি সুবিধা তো যুক্ত হয়নি, বরঞ্চ ডিজিটাল ধারার ব্যবসা হিসেবে আইটি ও  আইটিইএসে যে সুবিধা পাওয়া যেত, সেটা থেকে এই খাতের উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। একদিকে এখনো ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ই-কমার্স যুক্ত হয়নি। অন্যদিকে প্রচলিত ব্যবসা বা দোকানের সঙ্গে বেশকিছু জায়গায় ভিন্ননীতির কারণে শুরুতেই একটা অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে এই খাতের উদ্যোক্তাদের।

আমাদের অনেক দাবির মধ্য থেকে কয়েকটা মাত্র আমরা চেয়ে আসছি বিগত কয়েক বছর ধরে। গত ২০-২১ অর্থবছরে একটিমাত্র দাবি পূরণ হয়েছে, সেটা হলো ই-লার্নিং ও অনলাইন প্রশিক্ষণের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার। বিগত তিন বছরে এই খাতে উদ্যোক্তার সংখ্যা ২০ থেকে ২০০–তে উন্নীত হয়েছে।

এবার আমাদের দাবি ছিল, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ফুলফিলমেন্ট সেন্টার, স্টোর হাউস ও সর্টিং সেন্টার ও পরিবহন খরচ প্রয়োজন, এই খরচ পণ্যের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলে। তাই এটি রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তা ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি–সংক্রান্ত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অফিস ভাড়া ভ্যাটের আওতামুক্ত রয়েছে। ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানের বেলায়ও এই সুবিধা প্রয়োজন।

যে সব লজিস্টিক বা পণ্য সরবরাহ প্রতিষ্ঠান অন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের পণ্য সরবরাহ করে, তাদের ডেলিভারি চার্জের ওপর ভ্যাট অনধিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি, যা বর্তমানে ১৫ শতাংশ। কারণ, এটিও পণ্যমূল্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অনলাইন শপ, ই-কমার্সের ক্ষেত্রে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে মার্চেন্ট, ভেন্ডর, সরবরাহকারী, যোগানদার, প্রস্তুতকারী, আমদানিকারককে তার পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে উৎসে আয়কর কর্তনের বাধ্যবাধকতা থাকায় মার্চেন্টরা ৩ থেকে ৭ শতাংশ অতিরিক্ত দাম দাবি করে। সাধারণ বা ভৌত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা প্রচলিত দোকান বা শপিংমলের ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা না থাকায় পণ্যের দাম কম থাকে।

এর ফলে ক্রেতাদের একই পণ্য অনলাইন দোকান বা ই–কমার্স সাইট থেকে বেশি দামে কিনতে হয়।  তাই আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪–এর ধারা ৫২(২) এবং বিধি ১৬ থেকে ই-কমার্সকে উৎস করকর্তনকারীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ করছি, অন্তত ১০ বছরের জন্য হলেও।

আমরা ট্রেড লাইসেন্স ফি, ট্রেড লাইসেন্সের শর্তসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের ছাড় বা শিথিল করার জন্য বলেছি। তারা যেন নিজ বাসার ঠিকানায় ট্রেড লাইসেন্স করতে পারে। তারা যেন ডিবিআইডির মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারে এবং করমুক্ত আয়সীমা ও তাদের ট্রেড লাইসেন্স ফিয়ের ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়া প্রয়োজন।

কারণ, ডিজিটাল মাধ্যম যে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করছে, তা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী অধিকার তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। আমরা শুধু বর্তমানে এর প্রবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। অচিরেই দেশের আর্ধসামাজিক অবস্থায় এর প্রতিফলন দেখতে পাব।

অনুলিখন: তারিকুর রহমান খান