২০১৮ সালে অ্যাপল কম্পিউটারের তৈরি স্মার্ট ঘড়ি অ্যাপল ওয়াচে ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম বা ইসিজি পরীক্ষার সুবিধাটি যোগ হয়। এরপর থেকে এই ফিচার অনেক জীবন বাঁচাচ্ছে। এ ঘড়ি ৩০ সেকেন্ডের পরীক্ষায় হৃদস্পন্দনের যেকোনো অস্বাভাবিকতা—চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (এফিব) বলে, তার লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে। এফিব স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিওর ও হৃদ্যন্ত্র–সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকি বাড়ায়। তবে ঘড়ির এ ইসিজি অ্যাপ ব্যবহারের জন্য এটি কীভাবে কাজ করে বা কীভাবে সেটআপ দিতে হয়, তা জানতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে ইসিজিতে হার্টের সংক্ষিপ্ত সময়ের বৈদ্যুতিক বা ইলেকট্রিক্যাল কার্যক্রম ধারণ করা হয়। সাধারণত এটি চিকিৎসাসেবায় অনুমোদিত ইসিজি যন্ত্রে করা হয়ে থাকে। তবে অ্যাপল এই স্বাস্থ্য প্রযুক্তিটি তার স্মার্ট ওয়াচে যোগ করেছে। অ্যাপল ওয়াচের নিচের অংশের ইলেকট্রিক্যাল হৃৎস্পন্দন পর্যবেক্ষক (ইলেকট্রিক্যাল হার্ট রেট মনিটর) এবং ডিজিটাল ক্রাউন—উভয় ব্যবহার করে ইসিজি করা যায়।
এই ইসিজি অ্যাপ আনার ঘোষণার পর থেকেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হার্টের অস্বাভাবিক স্পন্দন শনাক্তে এটি কতটা নির্ভুল হবে, তা নিয়ে কথা বলেছেন। তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ৬০০ জনের ওপর চালানো পরীক্ষায় অ্যাপল ওয়াচ সাইনাস স্পন্দনের ক্ষেত্রে ৯৯.৬ শতাংশ নির্ভুল ছিল। আর এফিব লক্ষণের ক্ষেত্রে ৯৮.৩ শতাংশ নির্ভুল ছিল। যদিও এ ঘড়ি কারও প্রকৃত এফিব আছে কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে না। এ ছাড়া হৃদ্রোগ, স্ট্রোক বা হৃৎপিণ্ডের অন্যান্য পরিস্থিতির লক্ষণও এটি শনাক্ত করতে পারে না। মোটকথা ঘড়িটি কতটা নির্ভুল, তা জানা অসম্ভব। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা শুরু করা এবং প্রাথমিক সতর্কতায় কাজের ক্ষেত্রে এটি বেশ নির্ভুল।
অ্যাপল ওয়াচে ইসিজি অ্যাপ চালু করার জন্য অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ৪/৫/৬ বা ৭ প্রয়োজন। এ ছাড়া আপনার আইফোন এবং অ্যাপল ওয়াচে আইওএস অপারেটিং সিস্টেম এবং ওয়াচওএসের সর্বশেষ সংস্করণ থাকতে হবে। এতে ইসিজি অ্যাপের হালনাগাদ সংস্করণ পাওয়া যাবে। এরপর আপনার ফোনে অ্যাপল হেলথ অ্যাপ চালু করলে ইসিজি অ্যাপ সেটআপের প্রম্পট দেখাবে। এখন জন্মতারিখ প্রবেশ করালেই ইসিজির জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে অ্যাপটি।
প্রাথমিকভাবে সেটআপ শেষ হলে ইসিজি অ্যাপ চালু করে যেকোনো সময় ইসিজি করা যাবে। তার আগে ঘড়িটি কবজিতে সঠিকভাবে পরতে হবে। এরপর অপর হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে ডিজিটাল ক্রাউন স্পর্শ করতে হবে। খুব শক্তভাবে স্পর্শ করার দরকার নেই। ডিজিটাল ক্রাউনের পুরো বৃত্ত স্পর্শ করলেই হবে। এবার হৃৎস্পন্দনের তাৎক্ষণিক গ্রাফ দেখা যাবে এবং টাইমারে ৩০ সেকেন্ড থেকে ক্ষণগণনা শুরু হবে। ৩০ সেকেন্ড পরে ইসিজির ফল পাওয়া যাবে। সঠিক ফল পেতে কয়েকবার পরীক্ষা করা ভালো।
এ ঘড়িতে ম্যানুয়ালি ইসিজি করার বাইরেও চাইলে হার্টের অনিয়মিত স্পন্দন জানতে নোটিফিকেশন চালু করা যায়। এই জন্য অ্যাপটি চালু করে তাতে ‘হেলথ ডেটা’ অপশন চাপতে হবে। এরপর সেখান থেকে হার্ট অপশন চেপে স্ক্রল করে নিচে গিয়ে ‘ইরেগুলার রিদম নোটিফিকেশন’ অপশন চাপতে হবে। এখানেও জন্মতারিখ দিতে হবে।
সূত্র: ওয়্যারেবল ডটকম