রিভিউ

বাজারে আসা শাওমির নতুন ট্যাবটি কেমন  

শক্তিশালী গেম সহজেই খেলা যায় প্যাড-৬ ট্যাবে
সংগৃহীত

চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান শাওমি বাংলাদেশের বাজারে এনেছে নতুন মডেলের ট্যাবলেট কম্পিউটার ‘প্যাড-৬’। বাংলাদেশের বাজারে এর দাম নির্ধারিত হয়েছে ৪২ হাজার ৯৯৯ টাকা। ট্যাবলেটটির সঙ্গে কি-বোর্ড পেতে খরচ করতে হবে প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা। সঙ্গে দ্বিতীয় প্রজন্মের শাওমি স্মার্ট কলম বা স্টাইলাস ব্যবহার করতে গুনতে হবে আরও ৯ হাজার টাকা। এই পরিমাণ অর্থ খরচ শেষে যে ট্যাবলেটটি আমরা হাতে পাব, তার ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বেশ সুখকরই বলতে হবে।

ট্যাবলেটের প্রসঙ্গ এলেই অনেকের মনে আইপ্যাডের সঙ্গে একটি তুলনা চলেই আসে। শাওমি প্যাড-৬ ট্যাবের নকশা আরও বেশি করে আইপ্যাডকে মনে করায়। এর পেছনের অংশটি তৈরি হয়েছে মসৃণ অ্যালুমিনিয়ামে। সামনে রয়েছে ১১ ইঞ্চির আইপিএস এলসিডি পর্দা, এটা গরিলা গ্লাস-৩ দিয়ে সুরক্ষিত। প্যাড-৬-এর ওজন ৪৯০ গ্রাম। ফলে ট্যাবলেটটি সব রকমের কাজের জন্য ব্যবহারবান্ধব।

তিন দিন প্যাড-৬ ব্যবহার করে দেখা গেল, পর্দা বা ডিসপ্লে দারুণ। ইন্টারফেসের নকশা চমৎকার। পর্দার রিফ্রেস রেট ১৪৪ হার্টজ। তাই এটি দ্রুত সাড়া দেয়। অনেক বড় আকারের গেম খেলার সময়ও তা দৃষ্টিনন্দন অভিজ্ঞতা দেয়।

এ ছাড়া ভিডিও দেখার জন্য এমইএমসি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, ফলে কম ফ্রেম রেটের ভিডিওকে বেশি ফ্রেম রেটের মসৃণ ভিডিও হিসেবে দেখা যায়। এলসিডি পর্দা হওয়ায় ছবি ও ভিডিও সম্পাদনা করা যায় সহজে।

বেশি রেজল্যুশনের ভিডিও সহজেই দেখা যায়

ব্যবহারকারীরা চাইলে এই ট্যাবে ভারী গেম খেলতে পারবেন। কারণ, এতে আছে ৭ ন্যানোমিটারের স্ন্যাপড্রাগন ৮৭০ প্রসেসর। সঙ্গে অ্যাডরেনো ৬৫০ জিপিইউ (গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট)। পাবজি, কল অব ডিউটিসহ জনপ্রিয় সব ভারী গেম খেলেই প্রসেসর ও ডিসপ্লের সম্মিলনে ভালো অভিজ্ঞতা পাওয়া গেছে। হুট করে অনেক গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়তে হয়নি।

প্যাড-৬ ট্যাবলেটের প্রসেসরটি শক্তিশালী হলেও কিছুটা পুরোনো মডেলের। ট্যাবটিতে রয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ১৩ অপারেটিং সিস্টেম। শাওমি আগামী তিন বছর এটির জন্য নিরাপত্তা সফটওয়্যারের হালনাগাদ (সিকিউরিটি আপডেট) দেবে। কিন্তু প্রসেসর পুরোনো বলে এটি নতুন করে ফার্মওয়্যারের হালনাগাদ করতে পারবে না। ফলে এখন শক্তিশালী প্রসেসরের সুবিধা পাওয়া গেলেও কয়েক বছর পরে কার্যক্ষমতা কমে আসবে। দামটা বিবেচনায় নিয়ে এমন কিছু প্রত্যাশিতই ছিল।

মেমোরির অংশে ৬ জিবি অথবা ৮ জিবি র‌্যাম রয়েছে। স্টোরেজ অংশের ইউএফএস ৩.১ মডেলের ১২৮ জিবি আর ২৫৬ জিবি রম রয়েছে। খুব দ্রুত এটি দিয়ে এক যন্ত্র থেকে অন্য যন্ত্রে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। ফলে শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবীরা দক্ষতার সঙ্গে তাঁদের কাজ করতে পারবেন।

ট্যাবে কেউ খুব উচ্চ ক্ষমতার ক্যামেরা প্রত্যাশা করেন না। এই ট্যাবের পেছনে রয়েছে ১৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, যা দিয়ে ৪কে বা ৪ হাজার রেজল্যুশনের ভিডিও করা সম্ভব। সামনে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা। এই ক্যামেরাগুলো দিয়ে টুকটাক ভিডিও ধারণ, ভিডিও কলে কথা বলার মতো কাজগুলো নির্ঝঞ্ঝাটে করা সম্ভব। এ ছাড়া নথিপত্র স্ক্যান করার জন্য রয়েছে আলাদা সুবিধা।

এতে আছে ১৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা

শব্দের ক্ষেত্রে দুই পাশে চারটি স্টেরিও স্পিকার রয়েছে, যার শ্রুতি অভিজ্ঞতা খুবই চমৎকার বলতে হবে। গান শোনা, ক্লাস করা, ভিডিও বা সিনেমা দেখার মতো সব কাজ অনায়াসে করা যাবে। করা যাবে ভিডিও কনফারেন্সিং। ট্যাবটিতে ব্যাটারি রয়েছে ৮ হাজার ৮৪০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ঘণ্টার। ৩৩ ওয়াটের চার্জার দিয়ে চার্জও দ্রুত হয়। তবে উচ্চ ক্ষমতার প্রসেসর আর উন্নত ডিসপ্লের জন্য চার্জক্ষমতা আরেকটু বেশি থাকলে মন্দ হতো না।

ট্যাবে কোনো ৩.৫ মিলিমিটার পোর্ট রাখা হয়নি, যে কারণে এর সঙ্গে তারযুক্ত ইয়ারফোন বা হেডফোন যুক্ত করা যাবে না। ব্যবহার করতে হবে তারবিহীন ব্লুটুথ ইয়ারফোন। মুঠোফোনের সিমকার্ড ব্যবহারের সুযোগ নেই। ব্যবহার করতে হবে ওয়াই-ফাই। তাই বাইরে চলাচলের সময় ইন্টারনেট ব্যবহারে খানিকটা বেগ পেতে হতে পারে।

কোনো পণ্যই নিখুঁত নয়, তা সত্ত্বেও ৪২ হাজার ৯৯৯ টাকায় একটি অ্যান্ড্রয়েড ট্যাবলেট হিসেবে শক্তিশালী প্রসেসর, উন্নত পর্দা, শ্রুতি সুখকর শব্দ সিস্টেমসহ সব মিলিয়ে এই যন্ত্রটি ভালোই বলতে হবে।