রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিসিএস কম্পিউটার সিটি
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বিসিএস কম্পিউটার সিটি

২৫ বছর আগে যেভাবে চালু হয়েছিল দেশের প্রথম বিশেষায়িত কম্পিউটার বাজার

আজ থেকে ঠিক ২৫ বছর আগে ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশে প্রথম বিশেষায়িত কম্পিউটার বাজার ‘বিসিএস কম্পিউটার সিটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে তখন এই কম্পিউটার বাজার চালু করা হয়। বিসিএস কম্পিউটার সিটি নামের বাজার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বাণিজ্য খাতের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)।

যেভাবে শুরু কম্পিউটার সিটির

গত শতকের নব্বইয়ের দশকে বিসিএস প্রতিবছরই ‘বিসিএস কম্পিউটার শো’ নামের মেলার আয়োজন করেছে। দিন দিন মেলার দর্শকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৯৮ সালে আগারগাঁওয়ে সদ্য নির্মিত ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ভবনসংলগ্ন চারতলা উচ্চতার প্রশস্ত ভবনে মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় কম্পিউটার সমিতি।
সে সময়ে বিসিএসের সভাপতি ছিলেন আফতাব-উল-ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আহমেদ হাসান। মেলা আয়োজনের পর সেখানে স্থায়ী বিশেষায়িত কম্পিউটার বাজার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিসিএস কম্পিউটার শোর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে বিসিএস কম্পিউটার সিটি।

বিশেষায়িত কম্পিউটার বাজার চালু ও ব্যবস্থাপনার জন্য একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির আহ্বায়ক ও রায়ানস কম্পিউটারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ হাসান আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তখন কম্পিউটার ব্যবহারের হার বাড়তে শুরু করে। সরকারের দিক থেকে কম্পিউটার ও প্রযুক্তিসংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়। ১৯৯৮ সালের মেলার পর আমরা নতুন করে ভাবতে শুরু করি। ১৯৯৯ সালের আগে কম্পিউটারের দোকান মানেই ছিল এলিফ্যান্ট রোড ও পল্টনের বিভিন্ন মার্কেটের ভেতরে কিছু দোকান। কম্পিউটার ও প্রযুক্তির বাজার বলতে তখন দেশে কাঠামোগত কিছুই ছিল না।’

সেই পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির নেতারা এই বাজার চালু করার উদ্যোগ নেন। আহমেদ হাসান বলেন, ‘তখন ব্যবসার চেয়ে সবার কাছে কম্পিউটার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা আমাদের মধ্যে কাজ করেছিল। কম্পিউটারকে জনপ্রিয় করার জন্য আমাদের কাজ ছিল বেশি। তখনকার আগারগাঁও এখনকার মতো জনবহুল ও যাতায়াতবান্ধব ছিল না। আমরা অনেক পরিকল্পনা করে মার্কেটটি চালু করি। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সকাল ১০টা থেকে আমাদের মার্কেট একটি মেলার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। ১০ দিনের মেলা থেকে যাত্রা শুরু করে কম্পিউটার সিটি। মনে পড়ছে, প্রথম দিন সেই সময় ১৫ হাজারের বেশি দর্শনার্থী সেখানে হাজির হয়েছিলেন। সবার মূল আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন কম্পিউটারের মনিটর দেখা। জীবনে প্রথমবারের মতো সামনাসামনি কম্পিউটার দেখার সুযোগ সেদিন অনেকেই পেয়েছিলেন।’

আইডিবির কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া ভবনে শুরু হয় কম্পিউটার সিটি। শুরুর সময় ১ লাখ ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের কম্পিউটার সিটিতে প্রযুক্তিপণ্যের ১১০টি দোকান ছিল। পরবর্তী সময়ে এর সম্প্রসারণ ঘটে। বর্তমানে এই বাজারে ২০০টির বেশি দোকান রয়েছে। সবই কম্পিউটার প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট।

বিসিএস কম্পিউটার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পিনু চৌধুরী বলেন, দেশে কম্পিউটার জনপ্রিয় করতে এই মার্কেটের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কোনো নকল বা পুরোনো পণ্য নতুন বলে বিক্রি হয় না। দেশের অনেক জায়গায় কম্পিউটার বা প্রযুক্তির কোনো পণ্য পাওয়া না গেলেও এই মার্কেটে পাওয়া যায়। ২৫ বছরের পথচলায় এই মার্কেট দেশের প্রযুক্তির বাজারকে অনেক বড় করতে সহায়তা করছে। তখন এক শতাধিক দোকান থাকলেও এখন দুই শতাধিক দোকানের মাধ্যমে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ থেকে শুরু করে হাল আমলের এআই–নির্ভর অনেক প্রযুক্তি সেবা এই মার্কেট থেকে ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

জানা যায়, এখন প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ হাজার ক্রেতা বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে যান। বিশ্বের প্রযুক্তি বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই বাজারের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সামনে নতুন নতুন পণ্য হাজির করছেন। কম্পিউটার কেনার আগে ক্রেতারা কম্পিউটার বা ল্যাপটপ চালিয়ে দেখার যে সুযোগ পান, তা এখানে প্রথম চালু হয়। বর্তমানে মেট্রোরেল চালু হওয়ায় এই বাজারে ঢাকার নানা প্রান্ত থেকে তরুণ ক্রেতারা বেশি ভিড় করছেন। শুধু নতুন কম্পিউটার কেনা নয়, কম্পিউটার মেরামত করতেও অনেকে আসছেন।

২৫ বছর পূর্তির দিনে বিসিএস কম্পিউটার সিটি আজ সারা দিন খোলা রয়েছে। দেশের বন্যা ও সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বড় ধরনের কোনো আয়োজনের বদলে ক্রেতাদের ফুলের শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করা হচ্ছে।