গত বৃহস্পতিবার রাতে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সাররা। কেননা এ খাতের পুরোটা ইন্টারনেটনির্ভর। কয়েক দিন ইন্টারনেট না থাকায় সারা দেশের ফ্রিল্যান্সাররা বিদেশ থেকে গ্রাহক বা বায়ারের পাঠানো বার্তার উত্তর দিতে পারছেন না। আবার কারও কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তাঁরা।
ফ্রিল্যান্সারদের মতে, ইন্টারনেট চালু থাকলে এ ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো না। এ বিষয়ে ঢাকার ফ্রিল্যান্সার শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপওয়ার্কে (ইন্টারনেটে আউটসোর্সিংয়ের কাজ দেওয়া–নেওয়ার ওয়েবসাইট বা মার্কেটপ্লেস) তিনটি নতুন কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ায় গ্রাহকের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফলে এখন কাজগুলো আছে কি না, তা বুঝতে পারছি না। কাজগুলো বাতিল হয়ে গেলে আমার ১৫ থেকে ২০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতি হবে।’
ঢাকার আরেক ফ্রিল্যান্সার নয়ন মিয়া বলেন, ‘একসঙ্গে অনেক কাজ করছিলাম, সেগুলো শেষ পর্যায়ে থাকলেও ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণে গ্রাহকদের বুঝিয়ে দিতে পারিনি। আমার মার্কেটপ্লেসের অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে যায় কি না, সেই ভয়ে আছি। এ ক্ষতির পরিমাণ বুঝিয়ে বলা যাবে না। এককথায় বিপদে আছি।’
কুড়িগ্রামের ফ্রিল্যান্সার ফজলে ইলাহি বলেন, ‘অনেক কাজ সময়মতো গ্রাহককে বুঝিয়ে দিতে পারিনি। আর তাই ফাইভআরের (অনলাইন মার্কেটপ্লেস) “গিগ র্যাংক” হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।’ নেত্রকোনার রিমন হোসেন বলেন, ‘অনেক গ্রাহক বার্তা পাঠালেও সেগুলোর উত্তর সময়মতো দিতে না পারায় ফাইভআরের রেসপন্স রেট বেড়ে যাবে। এ ছাড়া সময়মতো কিছু গ্রাহকের কাজ বুঝিয়ে দিতে না পারায় ফাইবারের “টপ রেটেড ব্যাজ” হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।’ কুষ্টিয়ার বাপ্পি হোসেন বলেন, ‘বেশ কয়েকজন নতুন গ্রাহকের কাজ করছিলাম। সময়মতো আমার সাড়া না পেয়ে তারা যদি ফাইবারের কাছে অভিযোগ করে, তবে আমার ১ লাখ ১০ হাজার ডলার আয়ের আইডি বাতিল হয়ে যেতে পারে।’
ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষতির বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুব খারাপ অবস্থা। আমাদের যদি একটু আগে ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি জানানো হতো, তাহলে আমরা সে অনুযায়ী দ্রুত ফ্রিল্যান্সার ও গ্রাহকদের সতর্ক করে ই–মেইল বার্তা পাঠাতে পারতাম। ফলে ফ্রিল্যান্সাররা সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকেরাও জানতে পারতেন, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে। সে সুযোগও আমরা পাইনি। এখন আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের পর্যালোচনা (রিভিউ) কমে যাবে। ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন ফ্রিল্যান্সাররা। আমরা পিছিয়ে পড়ব। আমাদের ফ্রিল্যান্সারদের রিভিউ কমে সব কাজ চলে যাবে ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশে।’
এশিয়া জোনের বাংলাদেশ ফাইভআর কমিউনিটির প্রধান মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ফ্রিল্যান্সাররা দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা খেল। এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টকর হবে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগবে। ধরুন, ফাইভআরে ১০ লাখ কাজের ফরমায়েশ আছে, যার ৭০ শতাংশই বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে ছুটে যাবে। কারণ, গ্রাহকেরা বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অপেক্ষা করবে না। তাদের দরকার কাজ, তারা অন্য জায়গায় চলে যাবে। তবে আমি কমিউনিটি ম্যানেজার হিসেবে ফাইভআরে “ক্রাইসিস অ্যালার্ট” দিয়ে রেখেছি, যার ফলে ফ্রিল্যান্সারদের নতুন করে যেন সমস্যায় পড়তে না হয়।’