ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত সোমবার পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করায় সরকারের পতন হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকেই দেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে ১১-১২ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বেশ ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার তরুণেরা। সরকার পতনের পর এখনো দেশ পুরো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি।
আজ বুধবার বেশ কয়েকজন সফল ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের সবারই বক্তব্য হলো, দেশে শান্তি ফিরে এলে বিদেশের গ্রাহক বা বায়ারদের আস্থাও ফিরে আসবে। নিজেদের মধ্যে রেশারেশি বাদ দিয়ে এক সঙ্গে সবাই মিলে দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতে ও সামনের দিকে এগোতে হবে বলে মনে করেন ফ্রিল্যান্সাররা। ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিংয়ের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন তাঁরা। তবে ভবিষ্যতে কখনোই যেন ইন্টারনেট বন্ধ না হয়, সেটা নিশ্চিতক করার কথাও বলেছেন একাধিক ফ্রিল্যান্সার। নতুন সরকার গঠন হওয়ার পর ইন্টারনেটকে মৌলিক চাহিদা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
ঢাকার ফ্রিল্যান্সার শফিউল আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যা নষ্ট হওয়ার হয়ে গেছে। বড় বড় বায়াররা বাংলাদেশ থেকে সরে গিয়ে অন্য দেশে কাজ করাচ্ছেন। আমাদের কাজের মান ভালো হওয়া সত্বেও তাঁরা আস্থা রাখতে পারেননি শুধু ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে। এখনো যেসব গ্রাহক আমাদের সঙ্গে আছেন তাঁদের বিভিন্ন সংবাদের লিংক ও বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো ছবি পাঠিয়ে দিয়ে আমরা বলেছি, এখন সব ওকে। নতুন বায়াররা আস্থা পাচ্ছেন। অনেক বায়ারকে বাড়তি কাজ করে ক্ষতি পুষিয়ে দিচ্ছি। তবে আস্থার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে।’
ঢাকার ফিল্যান্সার এমরাজিনা ইসলাম বলেন, ‘অনেক গ্রাহক চলে গেছেন। যাঁরা আছেন তাঁরা আমাদের অবস্থা জানেন। একটা কারণ তো আছেই, সেটা অনেক দিনের সম্পর্ক, যেমন আমার একজন বায়ার আছেন যার কাজ ২০১২ সাল থেকে করছি। তিনি বলেছেন তোমরা সাবধানে থাকো। সবকিছু ঠিক হোক। দেশ স্বাভাবিক হলে বায়ারের আস্থাও ফিরবে। এখন আমাদের সবাই মিলে দেশ গড়ার চেষ্টায় নামতে হবে।’
ফ্লিট বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল আলম বলেন, ‘আমরা অ্যামাজান ওয়ালমার্ট ও স্টোর ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করি। ২৫০ কর্মী নিয়ে আমি রাজশাহী থেকে কাজ করে থাকি। বায়াররা আমাকে প্রশ্ন করছে, আবার কি ইন্টারনেট সংযোগ বিছিন্ন হতে পারে? আমি তাঁদের কিছু নিউজ লিংক পাঠিয়ে দিয়েছি যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিচ্ছেন। এখন আর সমস্যা নেই। তাঁরা আস্থা পাচ্ছেন। আমার বেশির ভাগ বায়ার ফিরে এসেছেন।’
ফ্রিল্যান্সারদের কাজ দেওয়া-নেওয়ার ওয়েবসাইট (অনলাইন মার্কেটপ্লেস) ফাইভআরের এশিয়া অঞ্চলের কমিউনিটি ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ফাইভআর মার্কেটপ্লেসে আমরা আগে থেকেই নোটিশ দিয়ে রেখেছি, আমাদের দেশে সমস্যা হচ্ছে। এ কারণে ক্ষতির পরিমাণটা আমাদের কম হলেও অনান্য মার্কেটপ্লেসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে সভা করছি, কীভাবে বায়ারদের বোঝানো যায়, কীভাবে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা যায়, তাদের ফেরানো যায়। অনেক বায়ার আবার আস্থা পাচ্ছেন বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের ওপর।’
টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার ও আপওয়ার্ক বাংলাদেশ গ্রুপের অ্যাডমিন কাজী মামুন বলেন, ‘দেশে ইন্টারনেট সংযোগ এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হওয়ায় ফ্রিল্যান্সাররা গ্রাহকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতে পারছেন, কিছুটা হলেও তাঁদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারছেন। তবে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই অনেক নতুন গ্রাহকেরা একটা দ্বিধার মধ্যে আছেন, আবারো ইন্টারনেট বন্ধ হয় কিনা। যে আস্থাহীনতার জায়গা তৈরি হয়েছে সেটা ধীরে ধীরে তা দূর হচ্ছে। পুরো আস্থা ফিরে আসতে বেশ সময় লাগবে এবং প্রয়োজন হবে একটি স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থার।’
উল্লেখ্য শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন ঘিরে বেশ কিছু দিন ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ফ্রিল্যান্সাররা। কেননা এ খাতের পুরো কাজ ইন্টারনেটনির্ভর। কয়েক দিন ইন্টারনেট না থাকায় সারাদেশের ফ্রিল্যান্সাররা বিদেশ থেকে গ্রাহক বা বায়ারের পাঠানো বার্তার উত্তর দিতে পারেননি। আবার কারো কারো কাজ জমা দেওয়ার সময় পেরিয়ে হয়ে গেছে। দেশে এখন সাড়ে ছয় লাখের মতো ফ্রিল্যান্সার কাজ করেন।