খাগড়াছড়ির এডুলাইফ আইটি ইনস্টিটিউটে প্রোগ্রামিং শিখছে শিশুরা
খাগড়াছড়ির এডুলাইফ আইটি ইনস্টিটিউটে প্রোগ্রামিং শিখছে শিশুরা

খাগড়াছড়িতে শিশুদের প্রোগ্রামিং শেখাতে আমিরের উদ্যোগ

৫ থেকে ১৪ বছরের প্রায় অর্ধশত শিশু। বেশির ভাগ শিশু চাকমা ও মারমা সম্প্রদায়ের। কেউ কেউ বসে আছে কম্পিউটারের সামনে। ছোট ছোট হাতের আঙুলগুলো খেলা করছে কম্পিউটার কি–বোর্ডে। আবার কেউ শ্রেণিকক্ষে বসে ইংরেজি শেখার ক্লাস করছে। ১১ এপ্রিল এমন দৃশ্য দেখা গেল খাগড়াছড়ির তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণকেন্দ্র এডুলাইফ আইটি ইনস্টিটিউটে। খাগড়াছড়ি জেলা শহরের অপর্ণা চৌধুরী পাড়া মহিলা কলেজ রোডের গীতা ভবনে এ প্রশিক্ষণকেন্দ্র। স্কুলপড়ুয়া ৫৬ শিশুকে ৫ ব্যাচে ভাগ করে শুক্র ও শনিবার কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও ইংরেজি শেখানো হয়।

এডুলাইফ আইটি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও কর্মীরা

এডুলাইফের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অভিভাবকদের কাছ থেকে যেমন সাড়া পেয়েছি, তেমনি ছাত্রছাত্রীরাও তাদের অগ্রগতির স্বাক্ষর রাখছে। পশ্চাৎপদ এলাকা হিসেবে খাগড়াছড়িতে এডুলাইফই প্রথম এ ধরনের একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।’

চালু হওয়ার দুই মাসের মধ্যে কিডস প্রোগ্রামের ছোট কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা এখন কম্পিউটারে টাইপ করা শুরু করেছে। অন্যদিকে ইংরেজিতে জড়তা কাটিয়ে কথা বলার পাশাপাশী প্রাথমিক পর্যায়ের প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোতে দক্ষ হয়ে উঠছে।

আমির জানান, ‘এটা আমাদের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জের এক কাজ। কারণ, অভিভাবকদের প্রোগ্রামিং শেখানোর ব্যাপার বোঝাতে কষ্ট হয়েছে। অনেক জায়গা থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। তাঁদের এভাবে বোঝানো হয়েছে, আপনার শিশুকে নাচ শেখান, গান শেখান, অভিনয় শেখান—পাশাপাশি যদি ইংরেজি, কম্পিউটার ও প্রোগ্রামিং শেখান; তাহলে এটি আপনার সন্তানের কাজে আসবে। তখন অভিভাবকেরা সাড়া দিয়েছেন।’

ইংরেজি শিখছে শিশুরা

কম্পিউটার ও ইংরেজি শেখানোর এ কোর্স সফল করতে বয়স অনুযায়ী ব্যাচ সাজানো হয়েছে। ৫ থেকে ৯ বছর বয়সীদের জন্য জুনিয়র ব্যাচ এবং ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের জন্য সিনিয়র ব্যাচ।

আমির হোসেন বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় উদ্যোগের মাধ্যম হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। আমরা সবাই জানি, ফ্রিল্যান্সিংসহ অন্যান্য বিষয়ে কর্মসংস্থান, যোগাযোগ ও তথ্য আদান–প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন। আমি যদি কম্পিউটার শিখতে যাই, চাকরির ইন্টারভিউতে যাই কিংবা কোনো ব্যবসা করি; তাতে ইংরেজি জানা, বোঝা ও বলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

আমির হোসেন ২০১৫ সালে খাগড়াছড়িতে এডুলাইফ আইটি ইনস্টিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ৩৫ বছর বয়সী আমির হোসেন ছিলেন হোমিও চিকিৎসক। পরে মুক্ত পেশাজীবী (ফ্রিল্যান্সার) হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিংয়ের কাজ শুরু করেন। এখন ২২ জন কর্মী নিয়ে খাগড়াছড়িতে বসে তিনি বিদেশের কাজ করে যাচ্ছেন।

আমির হোসেন বলেন, ‘ছাত্রজীবনের শুরু থেকে যদি ইংরেজিতে কথা বলা ও যোগাযোগ এবং কম্পিউটার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়, তবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। পেশাজীবনের শুরু ভালো হয়। পাশাপাশি যদি আগে থেকে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় যেমন প্রোগ্রামিং শেখা যায়, তবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সহজে কাজ করা যায়। এ জন্য আমরা পার্বত্য অঞ্চলের ছেলেমেয়েদের এ সুযোগ দিতে চাচ্ছি। যাদের আর্থিক সংগতি কম, তাদের বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’

শিশুদের এ কর্মসূচির পোশাকি নাম ‘এডুলাইফ কিডস—আফটার স্কুল’। এক বছর মেয়াদি এ কর্মসূচিতে শিশুরা স্পোকেন ইংলিশ, কম্পিউটার, গণিত ও কোডিং শিখতে পারছে।