কম্পিউটারে বাংলা লেখার শুরুটা বেশ আগে হলেও, ইন্টারনেটে, স্মার্টফোনে বাংলা লেখার সুবিধা পাওয়া গেছে ইউনিকোড–সমর্থিত বাংলা ফন্ট আসার পর থেকে। এখন অনেক ডিজিটাল যন্ত্রেই বাংলা লেখা যায়। তবে বাংলা ফন্টের বৈচিত্র্য ছিল কম। পোস্টার, ডিজিটাল ব্যানার ইত্যাদির চাহিদা বাড়ায় নান্দনিক বাংলা হরফের চাহিদা বাড়তে থাকে গ্রাফিক ডিজাইনারদের কাছে। এখন অনলাইনে বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে, যেগুলোতে অর্থের বিনিময়ে বা বিনা মূল্যে নানা রকম বাংলা ফন্ট পাওয়া যাচ্ছে।
আনুষ্ঠানিক বা ব্যক্তিগত লেখা থেকে শুরু করে প্রকাশনার কাজে বেশি ব্যবহৃত ফন্ট হচ্ছে বিজয়ের সুতন্বী এমজে। সহজলভ৵তার কারণে এটি বেশি জনপ্রিয়। একাডেমিক বইপত্র, গল্প, উপন্যাস কিংবা কবিতার বইয়েও এই ফন্ট বা এর কাছাকাছি নকশার ফন্টের ব্যবহার হয় বেশি। সুতন্বীর পাশাপাশি অনেক সময় চন্দ্রাবতী এমজে, আড়িয়াল খান এমজে, বুড়িগঙ্গাসুশ্রী এমজে, ব্রহ্মপুত্র এমজে ফন্টের ব্যবহারও দেখা যায়। তবে সরাসরি অনলাইনে এসবের ব্যবহার কম। মুদ্রণের ক্ষেত্রে এসব ফন্ট বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে মুদ্রণ ও ডিজিটাল—দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়, এমন ফন্টের চাহিদা বাড়ছে, িবশেষ করে ইউনিকোড ফন্টের।
রুচি ও পছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলা ভাষার স্টাইলিশ ফন্টের ব্যবহার বাড়ছে। বই, ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ, ব্যানার, ফেস্টুন, প্রিন্ট অ্যাড কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন ধরনের বাংলা ফন্টের ব্যবহার এখন ঊর্ধ্বমুখী। ফন্ট ডিজাইনাররাও বৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখে নানা রকম ফন্ট তৈরি করছেন। নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে নামিয়ে নিয়ে ইনস্টল করলে ফন্টগুলো ব্যবহার করা যায়। গ্রাফিক ডিজাইনারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখন কোন কোন বাংলা ফন্ট বেশি জনপ্রিয়। লিপিঘর, ফন্টবিডি, ফন্টলিপি, একুশে, মাত্রা, বর্ণশোভা ও বাংলাবর্ণ—এসব ওয়েবসাইটে পাওয়া বিচিত্র ধরনের ফন্ট। এর মধ্যে বেশি জনপ্রিয় লিপিঘর।
বাংলা ভাষার ফন্ট ব্যবহারেরর সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট লিপিঘর ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের ওয়েবসাইটে ২০০তম ফন্টটি প্রকাশ করেছে। লিপিঘর থেকে সবচেয়ে বেশিবার নামানো (ডাউনলোড) হয়েছে ‘মাহফুজ একে’ (বিনা মূল্যের)। এর ডাউনলোডসংখ্যা ৪ লাখ ৬১ হাজার ৪১৬। এরপর আছে আলিনুর ঐশী (৯৩ হাজার ৩৭৭ বার)। প্রিমিয়াম ফন্ট, অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে যেগুলো ডাউনলোড করা যায়, সেগুলোর মধ্যে বেশি বিক্রি হয়েছে আজাদ ফেনী (১ হাজার ৬৫২ ডাউনলোড)।
বিনা মূল্যের ফন্টগুলোর মধ্যে মাহফুজ হিমাদ্রী, আলিনুর স্মারকলিপি, শামীম চিত্রাণী, নিলাদ্রী মৈত্রী, নিলাদ্রী নদীয়া, কংকাবর্ণ, আজাদ পরী, শুভ বর্ণ, আয়াত ৫৬, সিরাজী শেখ, ইনসাফ, হাসান ইচ্ছেঘুড়ি, মৈনাক বুনিয়াদী ফন্ট বেশি জনপ্রিয়।
লিপিঘর বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলিনুর ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রজন্মের আমরা মাতৃভাষা আন্দোলন করতে পারিনি, কিন্তু ভাষার লিখিত রূপকে নান্দনিক করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবচেয়ে ভালো লাগে তখন, যখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখি আমাদের তৈরি ফন্ট ব্যবহার করে ডিজাইন করা হয়েছে।’
গ্রাফিক ডিজাইনারদের নানা ধাঁচের ফন্ট ব্যবহার করতে হয় বেশি। ফন্ট কিংবা টাইপোগ্রাফির মাধ্যমে লেখার চমৎকার রূপ দিতে হয় গ্রাফিক ডিজাইনারকে। বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের জ্যেষ্ঠ গ্রাফিক ডিজাইনার ইউসুফ মিয়া বলেন, ‘একসময় অল্প কিছু ফন্ট ব্যবহার করে আমরা ডিজাইন করেছি। কিন্তু এখন নতুন নতুন স্টাইলের ফন্ট ডিজাইনের ক্ষেত্রকে সহজ করে দিয়েছে।’
শুধু যে গ্রাফিক ডিজাইনাররাই এসব ফন্ট ব্যবহার করেন, তা নয়। অনলাইনে ছবি বা লেখার কোনো কিছু বানাতে সাধারণ ব্যবহারকারীরাও এসব ফন্ট ব্যবহার করেন। এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলা ফন্ট বেছে নেওয়ার সুবিধাটা বেশি। আর তা সবার জন্য।