সুখবর

ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল ওয়াহিদুল ইসলাম

২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ব্যাংকেই চাকরি করেন তিনি। এরপর ফিরে আসেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে। সফলতাও আসে।

ওয়াহিদুল ইসলাম
ওয়াহিদুল ইসলাম

২০০৬ সাল। কম্পিউটার নিয়ে নাড়াচড়া করতেন ওয়াহিদুল ইসলাম, ডাকনাম মুরাদ। এরপর ২০০৮ থেকে শুরু হয় তাঁর ফ্রিল্যান্সিং। ভালোই চলছিল। হঠাৎ ২০১৫ সালে পরিবার বেঁকে বসল, পড়াশোনা শেষ, একটা চাকরি করতে হবে। চাকরিটি হতে হবে ব্যাংকে।

এ সময় বিয়ের কথাও চলছিল ওয়াহিদুলের। পরিবারকে কোনোমতে বোঝাতে পারলেন, কিন্তু ব্যর্থ হলেন কনেপক্ষকে বোঝাতে। কনেপক্ষের দাবি, ছেলেকে ব্যাংকার হতে হবে। অবশেষে ফ্রিল্যান্সিং ছেড়ে ওয়াহিদুল যোগ দিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। বেতন মাসিক ৩০ হাজার টাকা। ২০১৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ব্যাংকেই চাকরি করেন তিনি। এরপর ফিরে আসেন ফ্রিল্যান্সিংয়ে।

শুরুর কথা

মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করায় ২০০৪ সালে বাবা মো. আবদুল ওয়াহাব ডেস্কটপ কম্পিউটার কিনে দিয়েছিলেন। এক বন্ধুর সঙ্গে ভাগাভাগি ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে ইন্টারনেটে ঢুঁ মারা শুরু করেন। বিভিন্ন বিষয় শিখতে লাগলেন। এরপর একটু একটু করে আয়।

ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুটা ছিল এইচএসসি পরীক্ষার পর ২০০৬ সালে। চট্টগ্রামে আমাদের বাসার পাশে, দামপাড়ায় চেনা এক ফটো স্টুডিও ছিল। ইচ্ছা ছিল ওখানে কাজ শিখব। কিন্তু আব্বা বলেছিলেন, “আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে দেখাও, তারপর সব হবে।”’

বাবার ইচ্ছা পূরণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে ভর্তি হন ওয়াহিদুল। সেখানে কম্পিউটারে আগ্রহী আরও কয়েকজন তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওয়াহিদুলের সামনে উন্মোচিত হয় হাইপ সাইট, ফোরেকস ও পে পার ক্লিকের জগৎ।

ওয়াহিদুল বলেন, ‘আমরা দু-তিনজন বন্ধু কম্পিউটারে কাজ করে ডলার আয়ের চেষ্টা করছিলাম। আসলে কীভাবে আয় করব, সেটার নির্ভরযোগ্য কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বন্ধু ফখরুলের কাছেই ২০০৮ সালে প্রথম ওডেস্কের (ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়ার ওয়েবসাইট, বর্তমান নাম আপওয়ার্ক) নাম শোনেন। তত দিনে ইমেজ প্রসেসিং থেকে গ্রাফিক ডিজাইন শিখে ফেলেছেন।’

ওয়াহিদুল বলেন, ‘প্রথম সপ্তাহে পাঁচ ডলারের কাজ পাই। মাস শেষে ১১০ ডলার যেদিন ব্যাংক থেকে তুললাম। এরপর কখনোই আর বাসা থেকে পড়ালেখার খরচ নিতে হয়নি।’

ওয়াহিদুল এখন সুইডেনের একটি কোম্পানির কাজ করেন চট্টগ্রামে বসে। বেতন বছরে ৪৫ হাজার ডলার (প্রায় ৪১ লাখ ৯১ হাজার টাকা)। এর পাশাপাশি নিজের একটা এজেন্সিও চালু করেছেন, সেখান থেকেও বছরে ১৯-২০ লাখ টাকা আয় করেন ওয়াহিদুল। ২০২১ সালে পেয়েছেন বেসিসের আউটসোর্সিং পুরস্কার। বর্তমানে তিনি আপওর্য়াক বাংলাদেশের কমিউনিটি লিডার হিসেবে কাজ করছেন।