আইসিপিসির ৪৫তম ওয়ার্ল্ড ফাইনালস চলছে ঢাকায়
আইসিপিসির ৪৫তম ওয়ার্ল্ড ফাইনালস চলছে ঢাকায়

চলছে প্রোগ্রামিং বিশ্বকাপের মূল প্রতিযোগিতা

রাজধানীর আন্তর্জতিক কনভেনশন সেন্টার, বসুন্ধরার (আইসিসিবি) ৪ নম্বর হল। ছোট ছোট খোপে বসা তিন জন করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কম্পিউটার প্রোগ্রামার। তাঁদের সামনে একটি করে কম্পিউটার। একেকটি দল। কোনো কোনো খোপে এক বা একাধিক রঙিন বেলুন। এর মানে হলো এই দল এতটা প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করেছে। একটা সঠিক সমাধান, একটা করে বেলুন। এরকম ১৩৭টি দল এখন প্রতিযোগিতা করছে প্রোগ্রামিংয়ের ‘বিশ্বকাপ’ আন্তুর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা—আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্বে (ওয়ার্ল্ড ফাইনালস)। ৬৯ টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিচ্ছে।

আইসিপিসির ৪৫তম ওয়ার্ল্ড ফাইনালস চলছে ঢাকায়। আজ সকাল ১১ টায় শুরু হয়েছে। শেষ হবে বিকাল ৪টায়। এবার চূড়ান্ত পর্ব দলগুলোর জন্য ১২টি প্রোগ্রামিং সমস্যা বা প্রশ্ন করা হয়েছে। প্রতিোযোগিতায় প্রথম একটি প্রশ্নের সমধান করে গত বছরের স্বর্ণপদক বিজয়ী দল দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। এই প্রতিবেদন লেখা (বেলা ৩টা) পর্যন্ত ১০ টি সমস্যার সমাধান করে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। নয়টির সমাধান করে এর পরেই আছে চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটি।

সংবাদ সম্মেলনে আইসিপিসি ফাউন্ডশনের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম বি পাউচার (ডান থেকে তৃতীয়)

প্রতিযোগিতা শুরুর পর পর আইসিপিসির আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে আইসিপিসি ফাউন্ডশনের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম বি পাউচার বলেন, ‘আমরা ছয় বছর আগে ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকায় আয়োজনের যে যাত্রা শুরু করেছিলাম, আজ তা সত্যিই হচ্ছে। আমার কাছে এটি বিস্ময়কর ও আনন্দের। আইসিপিসি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা সমাধানের আয়োজন। আগামীর পৃথিবীতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং দিয়ে বড় বড় সমস্যার সমাধান করতে হবে। আইসিপিসিতে যাঁরা অংশ নেন, তাঁরা পৃথিবীর সেরা প্রোগ্রামার হয়ে থাকেন। তাঁদের মেধা মানবতার কাজে লাগবে।’

আইসিপিসির আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য এবং আইসিপিসি ঢাকার পরিচালক কামরুল আহসান বলেন, ‘এশিয়া মহাদেশে চতুর্থ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এই প্রতিযোগিতা হচ্ছে। যা দেশ হিসেবে আমাদের বড় এক অর্জন। এর আগে জাপান, চীন ও থাইল্যান্ডে চূড়ান্তপর্ব হয়েছিল।’ ইউএপির সাবেক উপাচার্য প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে এ আয়োজনের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাভিদ শফিউল্লাহ, আইসিপিসি ২০২২ ওয়ার্ল্ড ফাইনালসের পরিচালক মাইকেল জে ডনাহু, পৃষ্ঠপোষক হুয়াউইয়ের যোগাযোগ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিকি ঝ্যাং এবং জেট ব্রেইনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অঁদ্রে ইভানভ। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন লুসা মির্জা।

আজ সন্ধ্যায় আইসিসিবিতে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের আইসিপিসি চূড়ান্ত পর্ব। সেখানেই ঘোষণা করা হবে ফলাফল এবং চলবে পুরস্কার বিতরণী।

প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দল (পেছনে)

আইসিপিসির চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের আট দল

আইসিপিসির ১৪২টি দলের মধ্যে বাংলাদেশের যে আটটি দল এবার অংশ নিচ্ছে, তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো—

১. আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ‘এআইইউবি ক্যাপচার্ড’। এই দলের প্রতিযোগী—সাদি মো. আজিজ খান, আবদুল্লাহ আল মুজাহিদ ও হাফিজুর রহমান। কোচ ইমরান জিয়াদ।

২. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বুয়েট নার্ডহার্ড’ (ইফতেখার হাকিম, নোশিন নাওয়াল ও অপূর্ব সাহা এবং কোচ মোহাম্মদ সোহেল রহমান)।

৩. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জেইউ গ্লাস হাফ ফুল’ (সাকিব হাসান, চয়ন কুমার রায় ও অনিক সরকার এবং কোচ মো. এজহারুল ইসলাম)।

৪. রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রুয়েট অ্যাসার্ট’ (শাহওয়াত হাসনাইন, তৌহিদুল ইসলাম ও রিসাল শাহরিয়ার এবং কোচ বর্ষণ সেন)।

৫. নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির ‘এনএসইউ স্টোলিচনায়া’ (আকাশ নালার্ড, সালমান সাহেল ও মেহরান সিদ্দিকী এবং কোচ সিলভিয়া আহমেদ)।

৬. শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বার্লকাম্পমেসি’ (সৈকত হোসেন, মো. শাহজালাল সোহাগ ও ফাহিম তাজওয়ার এবং কোচ এনামূল হাসান)।

৭. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিইউ ফ্লেয়ারব্লিৎজ ৪.০’ (রিয়াদ হোসেন, আসিফ জাওয়াদ ও নাইমুল ইসলাম এবং কোচ মো. মাহমুদুর রহমান)।

৮. আয়োজক ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ‘ইউএপি লুমস’ (আশরাফুল ইসলাম, মো. কবির সাদি ও অমিত সরকার এবং কোচ বিলকিস জামাল ফেরদোসি)।