জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুসারে বাংলাদেশে প্রত্যেক নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। বর্তমানে জন্মনিবন্ধনের মতো মৃত্যুসনদ অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। যে কারও মৃত্যুসনদের আবেদন ফরম আসল কি না, সেটি অনলাইনে যাচাই করা যায়। মৃত্যুসনদ জন্মসনদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ একটি সনদ।
মৃত্যু অনিবার্য। পরিবারের কেউ মারা গেলে বিলম্ব না করে অবশ্যই তাঁর মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য আবেদন করে মৃত্যুসনদ সংগ্রহ করে রাখতে হবে। মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার বা ওয়ারিশ হিসেবে সম্পত্তি হস্তান্তর বা মালিকানা দাবি এবং বিভিন্ন সরকারি কাজে মৃত ব্যক্তির মৃত্যুসনদ প্রয়োজন হয়।
অনলাইনে মৃত্যুসনদের জন্য আবেদন করতে মৃত ব্যক্তির জন্মনিবন্ধনও অনলাইন হতে হবে। হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন দিয়ে অনলাইনে মৃত্যুনিবন্ধন আবেদন করা সম্ভব নয়। আবেদন করতে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করার ক্ষেত্রে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর প্রত্যয়নপত্র মৃত্যুর প্রমাণপত্র হিসেবে দিতে হবে। আর যদি বাড়িতে মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে জানাজা সম্পাদনকারী ইমাম অথবা সৎকারসম্পন্নকারীর প্রত্যয়নপত্রের প্রয়োজন হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধির দেওয়া প্রত্যয়নপত্রও ব্যবহার করা যাবে। কবরস্থান, সমাধি বা সৎকারস্থলের তত্ত্বাবধায়কের দেওয়া দাফন বা সৎকার রসিদের অনুলিপি। এ ছাড়া অনলাইনে আবেদন করার জন্য আরও লাগবে মৃত্যুস্থানের ঠিকানা। মৃত ব্যক্তির বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা। মৃত্যুসনদের জন্য যিনি আবেদন করবেন, তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ লাগবে। মৃত্যুর তথ্য প্রদানকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন লাগবে।
অনলাইনে নতুন মৃত্যুসনদের জন্য আবেদন করতে এই ওয়েবসাইটে যেতে হবে। জন্মনিবন্ধন নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে আবেদনের জন্য প্রবেশ করতে হবে। তারপর মৃত্যুর কারণ, মৃত্যুস্থানের ঠিকানা, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এবং তথ্য প্রদানকারীর তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে। মৃত্যুনিবন্ধন অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়, পৌরসভা কিংবা সিটি করপোরেশন অথবা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে আবেদন করতে হবে।
নতুন মৃত্যুনিবন্ধন আবেদন কয়েকটি ধাপে করতে হবে। প্রতিটি ধাপ যথাযথভাবে সম্পন্ন করলে নিজে নিজে অনলাইনে মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য আবেদন ও মৃত্যুসনদ গ্রহণ করতে পারবেন।
আবেদন করার প্রথম ধাপেই মৃত ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে জন্মনিবন্ধন তথ্য অনুসন্ধান করতে হবে। ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন অনলাইন হয়ে থাকলে অনুসন্ধান করার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি-সম্পর্কিত কিছু তথ্য প্রদর্শিত হবে। তথ্য ঠিক থাকলে ‘নির্বাচন করুন’ বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হতে হবে।
মৃত্যুসনদ সংগ্রহ করার কার্যালয় নির্বাচন
নিবন্ধন কার্যালয় বাছাই করার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি যে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা, সেই ঠিকানা বাছাই করতে হবে। সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকা হলে কাউন্সিলর কার্যালয়, ইউনিয়ন হলে ইউনিয়ন পরিষদ দিতে হবে।
আবেদনকারীকে মৃত্যুর তারিখ ও মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করতে হবে। মৃত্যুর কারণ হিসেবে অনেক কারণ দেওয়া রয়েছে, সেখান থেকে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে যে কারণটি প্রযোজ্য, সেটি বাছাই করতে হবে। এর বাইরে তথ্য হিসেবে স্বামী অথবা স্ত্রীর জন্মনিবন্ধন নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র যুক্ত করা যেতে পারে।
মৃত্যুস্থান ও মৃত্যুর সময় বসবাসের ঠিকানা
মৃত ব্যক্তি যেখানে মারা গিয়েছিলেন, সেই স্থানের বিবরণ দিতে হবে। মৃত্যুর স্থানের বিবরণ হিসেবে বিভাগ, জেলা, উপজেলা ইউনিয়ন, গ্রামের নাম ও বাসার নম্বর দিয়ে ফরম পূরণ করতে হয়। মৃত্যুর স্থান ও বসবাসের ঠিকানা আলাদা হলে দুটি ঠিকানার তথ্যই দিতে হবে।
মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য যে ব্যক্তি আবেদন করছেন, তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর অথবা জন্মনিবন্ধন নম্বর প্রয়োজন হবে। জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে অবশ্যই সেটি অনলাইন হতে হবে। এর সঙ্গে একটি সচল মুঠোফোন নম্বর দিতে হবে। চাইলে ই-মেইল ঠিকানাও যুক্ত করা যাবে। এরপর আবেদনকারীর সঙ্গে মৃত ব্যক্তির সম্পর্ক সিলেক্ট করতে হবে। এ ধাপে শেষের দিকে আবেদনকারীর জন্মনিবন্ধন নম্বর পুনরায় পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।
মৃত্যুসনদের জন্য অনলাইনে আবেদন করার যেসব ধাপ সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর তথ্য সঠিক আছে কি না, সেটা যাচাই করার পালা সব শেষে। আবেদনের একটি বিবরণী সংক্ষেপে দেখানো হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে আবেদনটি সম্পন্ন করতে হবে। আর যদি কোথাও কোনো রকম ভুল চোখে পড়ে, তবে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে কাঙ্ক্ষিত তথ্য পুনরায় সংশোধন করা যাবে।
মৃত্যুনিবন্ধন ফরম জমা দেওয়ার (সাবমিট করা) পর একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি দেখা যাবে। মৃত্যুনিবন্ধন অ্যাপ্লিকেশন আইডি সংগ্রহ করে রাখতে পারেন অথবা পেজটি প্রিন্ট করে নিতে পারেন। মৃত্যুসনদ হাতে পেতে বা ডাউনলোড করতে অ্যাপ্লিকেশন জাতীয় পরিচয়পত্র ও মৃত্যুসনদের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ বা নিবন্ধকের কার্যালয় যোগাযোগ করতে হবে।
ব্যক্তি মারা যাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে অনলাইনে মৃত্যুনিবন্ধন করলে বিনা মূল্যে মৃত্যুসনদ সংগ্রহ করা যাবে। তবে মৃত্যুর ৪৫ দিনের বেশি ও ৫ বছরের কম—এ সময়ের মধ্যে নিবন্ধন করলে সনদ পেতে ২৫ টাকা সরকারি ফি প্রদান করতে হয়। ৫ বছরের বেশির ক্ষেত্রে মৃত্যুসনদ গ্রহণ করতে ৫০ টাকা ফি প্রদান করতে হয়।