সদ্য সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ কজন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যাপক সক্রিয় থাকতেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যখন ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখনো সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় দেখা গেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজও সক্রিয় ছিল সেই সময়ে। প্রায় প্রতিদিনই পোস্ট, ছবি, ভিডিও, লাইভে সরব ছিল পেজগুলো।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এই পেজগুলো যেন হারিয়েই গেছে ফেসবুক থেকে। গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার ফেসবুক ঘেঁটে দেখা যায়, বেশি সরব নেতাদের পেজ বা প্রোফাইলগুলো ফেসবুকে আর নেই, এসব পেজে লাখ লাখ অনুসারী ছিলেন।
সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের কোনো ভেরিফায়েড পেজ বা প্রোফাইল এখন নেই ফেসবুকে। নেই তাঁর কোনো পোস্ট। সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের পেজও উধাও ফেসবুক থেকে।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ সক্রিয় রয়েছে। ৫ আগস্ট দেওয়া একটি পোস্ট দেখা যাচ্ছে, তবে এর আগের কোনো পোস্ট এ পেজে দেখা যায় না।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভেরিফায়েড পেজ সক্রিয় আছে এখনো। সর্বশেষ পোস্ট ৫ জুলাই। ১২টি ছবি পোস্ট করেছেন তিনি। স্থান পদ্মা সেতুর সার্ভিস এলাকা। ওবায়দুল কাদের বেশির ভাগ সময় একসঙ্গে ১০টির বেশি করে ছবি পোস্ট করতেন। এ নিয়ে নেটিজেনরা মাততেন ব্যাপক আলোচনায়।
সদ্য সাবেক স্বতন্ত্র এমপি ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল ইসলাম সুমন তো রীতিমতো ফেসবুক-ইউটিউব তারকা ছিলেন। তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন নামে যে ফেসবুক পেজ রয়েছে, সেটিতে লাইকের পরিমাণ ৫৭ লাখ। কিন্তু এর পাশ থেকে নীল টিক (ভেরিফায়েড পেজের প্রতীক) সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই পেজে সর্বশেষ ভিডিও পোস্ট দেওয়া হয়েছে ৪ আগস্ট।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজগুলো আর নেই। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভেরিফায়েড পেজ সক্রিয়। যুবলীগের পেজ থেকে আজ সন্ধ্যার পরও ভিডিও পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ সরিয়ে দিয়েছে ফেসবুকের ও হোয়াটসঅ্যাপের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মেটা। ফেসবুকের নীতিমালা লঙ্ঘন করায় পেজটি বন্ধ করা হয় বলে জানা গেছে। শনিবার (৩ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে সাদ্দাম হোসেনের পেজটি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ইনানের পেজটিও সরিয়ে ফেলা হয়।
আলোচিত পেজগুলো ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে কি না, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কোনো পেজ বা প্রোফাইলে অনেক বেশিসংখ্যক ব্যবহারকারী রিপোর্ট করলে সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। আবার অনেক সময় ব্যবহারকারী নিজেও পেজ নিষ্ক্রিয় (ডিজঅ্যাবল) করে রাখতে পারেন।
‘সাইবার ৭১’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষে সরব তৎপরতা চালায়। এই গ্রুপ-সংশ্লিষ্ট একজন অ্যাডমিন প্রথম আলোকে জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যাঁরা উসকানিমূলক পোস্ট প্রকাশ করছিলেন, তাঁদের পেজে ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে ‘সাইবার অ্যাকশন’ নেওয়া হতো। বিভিন্ন পদধারী নেতার পেজের বিরুদ্ধেও একই রকম তৎপরতা চালানো হতো।