‘সাইবার বুলিং ও অনলাইনের ক্ষতিকর প্রভাব রোধে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি ও দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা
‘সাইবার বুলিং ও অনলাইনের ক্ষতিকর প্রভাব রোধে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি ও দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা

সাইবার বুলিংয়ের মানসিক চাপ মোকাবিলার কৌশল শেখানো হবে শিক্ষার্থীদের

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে সাইবার বুলিং বা অনলাইন হেনস্তার ঘটনা বাড়ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরাই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে থাকেন। ফলে ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি অভিভাবক ও কাছের মানুষেরা নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন। আর তাই নারীদের এ বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি সাইবার বুলিংয়ের মানসিক চাপ মোকাবিলার কৌশল শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) অধিদপ্তরের আওতাধীন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। ‘সাইবার বুলিং ও অনলাইনের ক্ষতিকর প্রভাব রোধে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি ও দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক এ উদ্যোগের আওতায় প্রাথমিকভাবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শতাধিক নারী শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইউএনডিপি বাংলাদেশের পিটিআইবি প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’।

সম্প্রতি রাজধানীর আইডিবি ভবনে অবস্থিত ইউএনডিপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই উদ্যোগের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পিটিআইবি প্রকল্পের পরিচালক মো. আবু সাঈদ। এ সময় তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যাগুলো খুবই নাজুক এবং এগুলো অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। অনেক সময়ে মানসিক সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার বা কাছের মানুষেরাও নিজের অজান্তে আরও ক্ষতি করেন। তাই, সাইবার বুলিং বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের জেন্ডার টিম লিডার শারমিন ইসলাম বলেন, অনলাইনে যাঁরা বুলিং করেন, তাঁদের মানসিকতা নিয়ে গবেষণা হওয়া জরুরি। এর মাধ্যমে এই ধরনের সমস্যা সমাধানের কার্যকরী উপায় বের করা সহজ হবে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সাইবার বুলিং ও অনলাইনের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় ভুক্তভোগীর সহপাঠী, বন্ধু,পরিবার বা প্রতিষ্ঠানেরও ভূমিকা রয়েছে। সামগ্রিক শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে আমরা শুধু সমস্যাটির এক-তৃতীয়াংশ সমাধান করতে পারব। পূর্ণাঙ্গ সমাধানের জন্য সাইবার বুলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরও শোধরাতে হবে। সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে দৃঢ়তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের পরিচালক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তার জন্য বর্তমানে দেশে বিভিন্ন কেন্দ্র রয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কারের কারণে অনেকেই মনোসামাজিক সেবা গ্রহণ করলেও অন্যদের জানতে দেন না। তাঁরা মনে করেন, মনোসামাজিক সহায়তা গ্রহণের কারণেও সামাজিক হেনস্তার শিকার হতে হবে। এই সমস্যা দূর করতে আমাদের সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের পরিচালক মেহজাবিন হক বলেন, ‘আমাদের শুধু একটি-দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোসামাজিক সহায়তা প্রদান করার চর্চা করলে হবে না, আমাদের ভাবতে হবে ভবিষ্যতে এই উদ্যোগকে কীভাবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।’

ইউএনডিপি বাংলাদেশের পক্ষে শাহরিন তিলোত্তমা বলেন, সাইবার বুলিং বা অন্যান্য বুলিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু ভুক্তভোগী একাই কষ্ট পান না। বরং তাঁর অভিভাবক ও কাছের মানুষেরাও কষ্ট পান। এই সমস্যার সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি।

মনের বন্ধুর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদা শিরোপা বলেন, ‘মনের বন্ধু বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে সহজলভ্য করতে ২০১৬ থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মনের বন্ধু বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধি ও মনোসামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউএন উইমেনের প্ল্যানিং, মনিটরিং এবং রিপোর্টিং এনালিস্ট তানিয়া শারমিন, বাংলাদেশ  পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সহকারী কমিশনার রোকসানা সুজানা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড জাস্টিস সিনিয়র কর্মকর্ত (কমিউনিকেশন ও ডকুমেন্টেশন) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম এবং সিবিএম গ্লোবালের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পরিচালক।