শিখোর সিইও শাহির চৌধুরী
শিখোর সিইও শাহির চৌধুরী

শিখোতে বিনিয়োগের আগমুহূর্তে কেন সরে গিয়েছিল স্টার্টআপ বাংলাদেশ

সবকিছু নির্ধারিত হওয়ার পর চুক্তি সই করার সময় শিখোতে পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ থেকে সরে যায় সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিষ্ঠান স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড (এসবিএল)। সরে যাওয়ার কারণ ছিল ‘রাজনৈতিক’। গতকাল বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে এ তথ্য সামনে নিয়ে এসেছেন অনলাইনে পাঠদানের ওয়েবসাইট শিখোর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহির চৌধুরী। এই পোস্টে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তরুণদের জন্য একটি যথাযথ স্টার্টআপ (উদ্ভাবনী উদ্যোগ) ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টের ব্যাপারে শাহির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি ২০২৩ সালের। তখন স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড, স্টার্জিয়ন ক্যাপিটাল ও সাজিদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে শিখোতে যৌথ বিনিয়োগ করতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কয়েক মাস চুলচেরা যাচাই-বাছাই ও অসংখ্য মিটিং করার পর আমরা প্রায় নিশ্চিত ছিলাম, স্টার্টআপ বাংলাদেশের ১৫ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ তহবিলের মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা আমাদের প্রকল্পে আসবে। যাহোক, চুক্তি স্বাক্ষরের দিন এসবিএল হঠাৎ চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায়। আমাকে আলাদা করে ডেকে বলা হয়, তৃতীয় কোনো পক্ষ থেকে এসবিএলকে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক কারণে আমাদের তহবিল দেওয়া যাচ্ছে না। শুনে আমি আকাশ থেকে পড়েছিলাম।’

শাহির চৌধুরী আরও বলেন, ‘আসলে পাঁচ কোটি টাকা বড় বিষয় নয়। আবার এটাও নয় যে এই টাকা না পেলে আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হবে। কিন্তু পরে দেখলাম সব জায়গায় আমাদেরকে কালোতালিকাভুক্ত করে রেখেছে। যেহেতু আমরা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি। দেশের সব স্কুল-কলেজ ডিজিটাইজেশন হচ্ছিল, এই জায়গাগুলোয় আমাদের সরিয়ে রাখা হয়েছিল। এখানেও দেখলাম বৈষম্য হচ্ছে, আরও যাঁরা শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের দু-একজনকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।’

‘বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে সবার জন্য ন্যায্য পরিবেশ গড়ার আহ্বান’ শিরোনামে ফেসবুকে বার্তা প্রকাশ করেছেন শাহির চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, ‘আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি যে শিক্ষা জীবন বদলে দিতে পারে, একইসঙ্গে বাংলাদেশের জন্য উজ্জ্বল একটি ভবিষ্যৎ গড়তে পারে। এই বিশ্বাসই আমাকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে এবং আমি সৌভাগ্যবান। কারণ, আমার ভিশনের ওপর আস্থা স্থাপন করে এমন অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর সমর্থন পেয়েছি। তাদের মধ্যে ছিল স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড (এসবিএল), যারা স্টার্জিয়ন ক্যাপিটাল ও সাজিদা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের বিষয়ে উৎসাহ নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কয়েক মাস চুলচেরা যাচাই-বাছাই ও অসংখ্য মিটিংয়ের পর আমরা প্রায় নিশ্চিত ছিলাম যে তাদের ১৫ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মধ্য থেকে পাঁচ কোটি টাকা আমাদের প্রকল্পে আসবে। যাহোক, চুক্তি স্বাক্ষরের দিন এসবিএল হঠাৎ সরে দাঁড়ায়। কেন? আমাকে আলাদা করে ডেকে বলা হয়, তৃতীয় কোনো পক্ষ থেকে এসবিএলকে অবহিত করা হয়েছে, রাজনৈতিক কারণে আমাকে ফান্ড দেওয়া যাচ্ছে না। শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম। শিখো-তে আমরা যাঁরা কাজ করছিলাম, তাঁদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও এ ঘটনাটি আমাদের অগ্রগতির পথে বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পুরো ব্যাপারটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বিস্ময়কর ও হতাশাজনক ছিল। পরবর্তী ঘটনা থেকে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে সরকারের সব রকম আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে শিখোকে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যোগাযোগ বজায় রাখার ও সহায়তা চাওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আইসিটি বিভাগ ও এসবিএল তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলোকেই বেছে নিয়েছে এবং সমর্থন করেছে।’

গতকাল ফেসবুকে দেওয়া শাহির চৌধুরীর বার্তা

শাহির চৌধুরী তাঁর বার্তায় অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আমাদের নতুন আইসিটি উপদেষ্টা বাংলাদেশের স্টার্টআপের বর্তমান অবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন। তাঁর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমি এ বিষয়টি আজকে উত্থাপন করছি। পূর্ববর্তী সরকারের সময় সুযোগ-সুবিধা পাওয়া স্টার্টআপগুলোকে সমর্থন করার পাশাপাশি আমরা যাঁরা অন্যায় ও প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ ন্যায্যতা ও সততার ওপর নির্ভরশীল। আমি আশা করি, আগামী দিনগুলোয় সব সিদ্ধান্ত এ দুটি নীতির আলোকেই নেওয়া হবে। স্বচ্ছতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে বাংলাদেশ ২.০।’

ফেসবুক পোস্টে শাহির চৌধুরীর করা অভিযোগের ব্যাপারে স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, স্টার্টআপ বাংলাদেশের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানে কেন বিনিয়োগ করা হয়েছে বা কেন করা হবে না, এ বিষয়টা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান প্রকাশ করে না।

প্রসঙ্গত, সরকারের আইসিটি বিভাগের অধীনে গড়ে ওঠা স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের বিভিন্ন উদ্ভাবনী উদ্যোগ বা স্টার্টআপে বিনিয়োগ করে থাকে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গত ১৬ জুলাই হঠাৎ নিজেদের ফেসবুক পেজে টেন মিনিট স্কুলের পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রস্তাব বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছিল স্টার্টআপ বাংলাদেশ। এর কয়েক দিন আগেই টেন মিনিট স্কুলের সহপ্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ফেসবুকে বার্তা দিয়েছিলেন।