অনলাইনে প্রতারণা রোধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে মেটা। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি ‘পিগ বুচারিং’ নামে পরিচিত একধরনের প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত ছিল, এমন ২০ লাখের বেশি অ্যাকাউন্ট মুছে দিয়েছে। এ প্রতারণায় অপরাধীরা অনলাইনে মিথ্যা সম্পর্ক তৈরি করে এবং ভুক্তভোগীদের লাভজনক বিনিয়োগের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ প্রতারণা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি–সম্পর্কিত বিনিয়োগের নামে পরিচালিত হয়।
পিগ বুচারিং কী
শব্দটি অদ্ভুত শোনালেও এর অর্থ হচ্ছে প্রতারকেরা ভুক্তভোগীদের অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল করার জন্য ধীরে ধীরে তাঁদের বিশ্বাস অর্জন করে। সাধারণত এটি শুরু হয় একটি বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে। এসব বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ডেটিং অ্যাপ বা একদম অপ্রত্যাশিত কোনো এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো হয়। প্রতারক নিজেকে আস্থাশীল ব্যক্তির রূপে উপস্থাপন করে এবং ধীরে ধীরে ভুক্তভোগীকে একটি লাভজনক বিনিয়োগে অংশ নিতে উৎসাহিত করে। প্রাথমিকভাবে তারা ছোট অঙ্কের অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দিয়ে আস্থা সৃষ্টি করে, তবে পরবর্তীকালে পুরো অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়।
কারা এই প্রতারণার নেপথ্যে
এই প্রতারণার মূল হোতা এশিয়ার কিছু দেশের সংগঠিত অপরাধী চক্র। বিশেষ করে কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমারে এই চক্র বেশি সক্রিয়। গবেষণা বলছে, প্রতিবছর প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার এ প্রতারণা কৌশলের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হয়।
এই প্রতারণা যেভাবে হয়
প্রতারকেরা প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠায়। ডেটিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাপে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে। এরপর ভুক্তভোগীর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতার মাধ্যমে আস্থাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করে। তারপর ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ‘নিশ্চিত’ লাভের আশ্বাস দিয়ে ভুক্তভোগীকে বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করে। প্রায়ই পেশাদার মনে হওয়া ভুয়া অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হয়। প্রথম দিকে ভুক্তভোগীকে ছোট অঙ্কের অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে তাদের কাছে প্রক্রিয়াটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। এরপর ভুক্তভোগী যখন বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেন, তখন প্রতারকেরা পুরো অর্থ নিয়ে পালিয়ে যায়।
মেটার পদক্ষেপ
মেটা দুই বছর ধরে এ সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতারণা কেন্দ্রগুলোর ওপর তদন্ত চালাচ্ছে। কম্বোডিয়ায় এ কার্যক্রম শুরু করে এখন অন্যান্য অঞ্চলে যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতে মেটা তাদের এ কার্যক্রম প্রসারিত করেছে। লাখ লাখ অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার পাশাপাশি মেটা তাদের তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করে এ ধরনের প্রতারণা থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করছে।
কীভাবে নিরাপদ থাকবেন
অনলাইনে অপরিচিত কোনো ব্যক্তির থেকে আসা বার্তা বা প্রস্তাব পেলে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে খুবই লাভজনক কোনো বিনিয়োগ প্রস্তাব অপরিচিত ব্যক্তির কাছ থেকে এলে সতর্ক থাকতে হবে। নতুন পরিচিত কোনো ব্যক্তি অনলাইনে বিনিয়োগের কথা বললেও সতর্ক থাকতে হবে। এগুলো প্রতারণাকৌশল হতে পারে। সন্দেহজনক কিছু নজরে এলে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ডটইন