কর্মস্থলের কাজ, বাজারসদাই, খেলা কিংবা খাবার অর্ডার—অনেক কিছুই এখন অনলাইনভিত্তিক হয়ে গেছে। অনলাইননির্ভর এসব কাজ করার জন্য বেড়েছে ক্লাউডভিত্তিক সেবা আর অ্যাপের ব্যবহার। আবার এসব লক্ষ্য করে সাইবার অপরাধীরাও বিভিন্ন কৌশলে হ্যাকিং, সাইবার হামলা বা প্রতারণা করছে। বাস্তব জগতের মতো অনলাইন পরিসরেও এখন নিরাপদ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডিজিটাল জগতে সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। কিছু কাজ কখনোই করা যাবে না। আবার তথ্য সুরক্ষিত রাখতে কিছু কাজ অবশ্যই করতে হবে। দেখে নেওয়া যাক অনলাইনে নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকার সহজ ১০ উপায়।
অপারেটিং সিস্টেম, সফটওয়্যারসহ নানাভাবে যন্ত্রে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। আবার অনেক সময় যন্ত্রে ক্ষতিকর প্রোগ্রামও থাকতে পারে। এগুলো ধীরে ধীরে যন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এমনকি হ্যাকাররা নজরদারিও করে থাকে। তাই অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে নিয়মিত যন্ত্র স্ক্যান করতে হবে। কেনা ছাড়াও কিছু কিছু অ্যান্টিভাইরাস বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়।
অনলাইনে যেকোনো ধরনের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। ৬০ বা ৯০ দিন পরপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে। অন্তত ১২টি অক্ষর দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করতে হবে। পাসওয়ার্ডে সংখ্যা, বর্ণ ও বিশেষ অক্ষরের মিশ্রণ থাকতে হবে। পাসওয়ার্ডে বড় ও ছোট হাতের অক্ষরের মিশ্রণ থাকতে হবে। কখনোই নিজের নাম, জন্মদিন—এ ধরনের তথ্য দিয়ে পাসওয়ার্ড তৈরি করা যাবে না। পাসওয়ার্ড যত জটিল হবে, এটি ততই শক্তিশালী হবে।
ব্যাকরণগত ভুল, বানানে অসংগতিসহ অপরিচিত কোনো ই-মেইল ঠিকানা থেকে আসা ই-মেইলে সতর্ক থাকতে হবে। ই-মেইলের উৎস যাচাই করতে হবে। এ ধরনের ই-মেইলে কোনো লিংক যুক্ত থাকলে সেটা খোলা যাবে না। এমনকি সংযুক্ত ফাইল বা অ্যাটাচমেন্ট দেখার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে।
হ্যাকাররা এখন ব্যবহারকারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে অনলাইনে হামলা চালায়। তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। জন্ম তারিখ ও ফোন নম্বর—এসব ব্যক্তিগত তথ্যও দেওয়া ঠিক নয়। কোথাও বেড়াতে গেলে সেই সময়েই বেড়াতে যাওয়ার ছবি দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। এতে হ্যাকাররা আপনার অবস্থান সহজেই শনাক্ত করতে পারবে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে। অনিরাপদ ওয়েবসাইটে ঢোকা যাবে না। ওয়েবসাইট খোলার আগে ওয়েব ঠিকানা বা ইউআরএল যাচাই করতে হবে। ইউআরএলে তালার চিহ্ন (লক আইকন) রয়েছে কি না, তা দেখে নিন। অবিশ্বস্ত উৎস থেকে সফটওয়্যার নামানো যাবে না। এমনকি গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ছাড়া অ্যাপ নামানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
বিভিন্ন অ্যাপ কাজের জন্য স্মার্টফোনের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, কন্ট্যাক্টস ইত্যাদি তথ্যে প্রবেশ করতে চাই। কোন অ্যাপ কোন ধরনের তথ্য দেখছে, তা নিয়মিত যাচাই করতে হবে। তৃতীয় পক্ষের তৈরি (থার্ড পার্টি) অ্যাপে এ ধরনের তথ্যে প্রবেশের অনুমতি দেখতে হবে।
অনলাইনে নিরাপদ থাকতে পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করতে হবে। এতে বাড়তি সুরক্ষা যোগ হবে এবং অনলাইন অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে। এ ছাড়া মুখাবয়ব, আঙুলের ছাপ ইত্যাদি শনাক্তকরণ পদ্ধতিও যোগ করতে হবে।
ক্লাউড চালু হওয়ার ফলে প্রয়োজনীয় এবং ব্যক্তিগত নানা তথ্য এখানে ইন্টারনেটের এই ভান্ডারে জমা রাখা হয়। তবে সংবেদনশীল তথ্য ক্লাউডে জমা রাখার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, কোনো কারণে সাইবার অপরাধীরা ক্লাউডে প্রবেশ করলে এসব তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হবে।
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকতে বা বিভিন্ন অনলাইন সেবা নেওয়ার জন্য অনেক তথ্য দিতে হয়। এসব তথ্য দেওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনের বাইরে বাড়তি কোনো তথ্য দেওয়া উচিত নয়। জন্ম তারিখ ও ঠিকানা—এ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, তখন তৃতীয় পক্ষের কোনো পার্টি সেবায় আপনার তথ্য চলে যাবে।
অনলাইনে সুরক্ষিত থাকতে তারহীন ওয়াই-ফাই নেওয়ার্ক ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। গণ ওয়াই-ফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ এবং ব্যক্তিগত তথ্য বিনিময়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভ্রমণের সময় যন্ত্রের ওয়াই-ফাই এবং ব্লুটুথ–সংযোগ বন্ধ করে রাখতে হবে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট